আবারো বন্যার কবলে ফেনী : প্রয়োজন সমন্বিত ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মপরিকল্পনা

আবারো বন্যার কবলে ফেনী : প্রয়োজন সমন্বিত ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মপরিকল্পনা

ফেনী, ৯ জুলাই ২০২৫: আবারো বন্যার কবলে ফেনী। টানা অতি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রধান নদীগুলো ফুঁসে উঠেছে, ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থান। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। জুলাই ২০২৫-এর এই বন্যা কোনো বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরিবেশগত অবহেলা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনার জটিলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত বিষাক্ত ফল। এই প্রতিবেদনে এই বন্যার পেছনের গভীর কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হলো।

বন্যার আশু কারণ: প্রকৃতির রুদ্র রূপ

এবারের বন্যার প্রত্যক্ষ কারণ দুটি—অকল্পনীয় মাত্রার বৃষ্টিপাত এবং উজানের পানির তীব্র চাপ।

রেকর্ড বৃষ্টিপাত: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৮ জুলাই পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এই চরম অতি বর্ষণ জেলার অভ্যন্তরীণ নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেয় এবং নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতাকে অতিক্রম করে যায়।

উজানের ঢল: একই সময়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বর্ষণের ফলে ফেনী, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোত নেমে আসে। উজানের এই পানির চাপ এবং স্থানীয় বৃষ্টিপাত—দুইয়ে মিলে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে, যা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।

 কাঠামোগত দুর্বলতা ও মানবসৃষ্ট সংকট: যা বিপর্যয়কে তীব্রতর করেছে

প্রাকৃতিক কারণগুলো বন্যার সূচনা করলেও, মানবসৃষ্ট কিছু দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা এর ভয়াবহতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

ত্রুটিপূর্ণ ও ভঙ্গুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ: ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বিশেষ করে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বাঁধগুলো, বছরের পর বছর ধরে স্থানীয়দের জন্য "আশীর্বাদের চেয়ে অভিশাপ" হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। অপরিকল্পিত নির্মাণ, নিয়মিত ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং নদীর গতিপথ বিবেচনায় না নেওয়ায় বাঁধগুলো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। এবারের বন্যায় পরশুরাম ও ফুলগাজীর অন্তত ১১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়া এর জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও, একটি টেকসই ও স্থায়ী সমাধান আজও অধরা।

নদী ও খালের মৃত্যু: ফেনীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নদী ও খাল এখন অস্তিত্ব সংকটে। ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্যে নদী ও খালের বিরাট অংশ ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেনীর ছয়টি উপজেলায় প্রায় ২৪৪টি নদী ও খাল দখল ও দূষণের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। একসময়ের খরস্রোতা নদীগুলো এখন সংকুচিত, ভরাট হয়ে যাওয়া মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে জলাবদ্ধতা এবং বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা: ফেনী শহরের জলাবদ্ধতা এবারের বন্যার একটি অন্যতম সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, যেখানে প্রাকৃতিক জলাধার ও নিম্নভূমি ভরাট করে ফেলা হয়েছে, এবং শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা এর মূল কারণ। বিদ্যমান ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করা এবং শহরের বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ সামলানোর জন্য তা যথেষ্ট না হওয়ায় পানি সরতে না পেরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে।

 ভূ-রাজনৈতিক ও জলবায়ুগত প্রেক্ষাপট: বৃহত্তর চালিকাশক্তি

স্থানীয় কারণগুলোর পাশাপাশি কিছু বৃহত্তর বিষয় ফেনীর বন্যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনা: ফেনী একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। উজানে অবস্থিত ভারত কর্তৃক নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ভাটিতে থাকা বাংলাদেশের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহারের জন্য সমঝোতা স্মারক থাকলেও, বর্ষা মৌসুমে আকস্মিক পানি ছেড়ে দেওয়া বা উজানে হওয়া টানা বৃষ্টিপাতের তথ্য দ্রুত আদান-প্রদানে ঘাটতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবারের ঢল সেই জটিলতারই প্রতিফলন, যা কার্যকর দ্বিপাক্ষিক নদী ব্যবস্থাপনার গুরুত্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের আগ্রাসন: বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়ার ধরন চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। চট্টগ্রাম বিভাগ, যার মধ্যে ফেনী অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন এসেছে—স্বল্প সময়ে অতি মাত্রায় বৃষ্টিপাতের (Extreme Rainfall Event) প্রবণতা বাড়ছে। ৮ জুলাইয়ের ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত এই পরিবর্তনেরই একটি অশনি সংকেত। আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামো পরিকল্পনা করার সময় জলবায়ু পরিবর্তনের এই নতুন বাস্তবতা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

 আর্থ-সামাজিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ করণীয়

এবারের বন্যার ফলে ফেনীর আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় এক আকস্মিক আঘাত হেনেছে। হাজার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। কৃষকের ফসল ও মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে এই অঞ্চলের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও পুনর্বাসনই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদী ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা:

১. টেকসই বাঁধ নির্মাণ: বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের মাধ্যমে নদীর গতিপ্রকৃতি, মাটির গঠন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

২. নদী ও খাল পুনরুদ্ধার: কঠোর আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে দখল হওয়া সমস্ত নদী ও খাল উদ্ধার করে পুনঃখনন করতে হবে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা: ফেনী শহরের জন্য একটি সমন্বিত ও আধুনিক ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪. সমন্বিত নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনা: আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ভারতের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে তথ্য আদান-প্রদান এবং যৌথ নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

৫. জলবায়ু অভিযোজন: জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমন অবকাঠামো নির্মাণ এবং কৃষি ও জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য গবেষণা ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

৮ জুলাইয়ের বন্যা ফেনীর জন্য একটি সতর্কবার্তা। যদি এখনই এই সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

সমন্বিত ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মপরিকল্পনা: ফেনী বন্যা ২০২৫

উদ্দেশ্য: দ্রুততম সময়ে বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধার করা, নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা এবং জরুরি ভিত্তিতে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী সুষমভাবে বিতরণ নিশ্চিত করা।

প্রথম ধাপ: জরুরি উদ্ধার ও আশ্রয় (প্রথম ২৪-৭২ ঘণ্টা)

১. উদ্ধার কার্যক্রমে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার:

 সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন: পরশুরাম ও ফুলগাজীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্গম গ্রামগুলোতে আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারের জন্য অবিলম্বে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ ইউনিট মোতায়েন করা।

 স্থানীয় নৌকা ব্যবহার: স্থানীয় জেলে ও মাঝিদের সহায়তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক উদ্ধারকারী নৌকা ও স্পিডবোটের ব্যবস্থা করা। শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্ধার করা।

 জরুরি কন্ট্রোল রুম: জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ২৪/৭ খোলা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা। হটলাইন নম্বরগুলো সকল মাধ্যমে (রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) ব্যাপকভাবে প্রচার করা।

২. নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন:

 আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতকরণ: ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র (স্কুল, কলেজ ও সরকারি ভবন) দ্রুততার সাথে চালু করা এবং আরও কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা।

 মৌলিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ: প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলো, অস্থায়ী টয়লেট এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করা।

দ্বিতীয় ধাপ: জরুরি ত্রাণ বিতরণ

১. শুকনো খাবার সরবরাহ:

 খাবারের প্যাকেজ: প্রতিটি পরিবারের জন্য কমপক্ষে ৩-৫ দিনের শুকনো খাবারের প্যাকেজ তৈরি করা। প্যাকেজে থাকবে চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, রুটি এবং বিশুদ্ধ পানির বোতল।

 বিতরণ কেন্দ্র: উদ্ধারকারী বোটের মাধ্যমে পানিবন্দী মানুষের কাছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরাসরি খাবার পৌঁছে দেওয়া। বিশৃঙ্খলা এড়াতে তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করা।

২. ঔষধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা:

 মেডিকেল টিম গঠন: প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে মোবাইল মেডিকেল টিম পাঠানো। টিমে একজন ডাক্তার বা প্যারামেডিক এবং স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন।

 জরুরি ঔষধ: মেডিকেল টিমের কাছে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন, প্যারাসিটামল, অ্যান্টি-হিস্টামিন, মেট্রোনিডাজল এবং সাধারণ জখমের জন্য ফার্স্ট এইড বক্স রাখা বাধ্যতামূলক।

 সাপের কামড়ের প্রতিষেধক: সাপের উপদ্রব বাড়তে পারে, তাই নিকটস্থ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-ভেনম মজুদ রাখা।

তৃতীয় ধাপ: সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা

১. কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেল:

 জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেল গঠন করা হবে। এই সেল সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজের সমন্বয় করবে।

 কোন এলাকায় কী পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন, কারা ত্রাণ পেয়েছে এবং কারা পায়নি—তার সঠিক তথ্য এই সেলের কাছে থাকবে।

২. স্বেচ্ছাসেবী ও এনজিওদের সম্পৃক্তকরণ:

 বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ব্র্যাক এবং অন্যান্য স্থানীয় ও জাতীয় এনজিও-দের ত্রাণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা।

 স্থানীয় ক্লাব, সামাজিক সংগঠন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করে তালিকা প্রণয়ন ও ত্রাণ বিতরণে সহায়তা নেওয়া।

৩. যোগাযোগ ও তথ্যের প্রবাহ:

 ফেনীর স্থানীয় রেডিও এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি, আশ্রয়কেন্দ্রের তথ্য এবং স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা প্রচার করা।

সাধারণ জনগণের জন্য করণীয়:

সরাসরি ত্রাণ না দেওয়া: বিশৃঙ্খলা এড়াতে ব্যক্তিগতভাবে বা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ত্রাণ বিতরণের চেয়ে জেলা প্রশাসনের কেন্দ্রীয় ত্রাণ তহবিলে বা স্বীকৃত এনজিও-র কাছে সাহায্য জমা দিন।

গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে এর সত্যতা যাচাই করুন। শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য শেয়ার করুন।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিবন্ধন: আপনি যদি শারীরিকভাবে সাহায্য করতে চান, তাহলে উপজেলা কন্ট্রোল রুমে বা স্বীকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে নিজের নাম নিবন্ধন করুন।

এই সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফেনীর বন্যাদুর্গত মানুষের কষ্ট লাঘব করা এবং পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

📣 পাঠকদের উদ্দেশ্যে:
প্রিয় পাঠক,
ফেনীর মানুষ আবারো দুর্যোগের মুখোমুখি—বন্যা তাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা, এমনকি প্রিয়জনদেরও কেড়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু সংবাদ জানলেই চলবে না, প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা।

আমরা যাঁরা নিরাপদে আছি, আমাদের দায়িত্ব ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো—সচেতনতা ছড়ানো, ত্রাণ পাঠানো কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সহায়তা করা।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যেন বেশি মানুষ জানে এবং এগিয়ে আসে।

“আপনার একটা শেয়ার কারও একটি খাবার, একটি আশ্রয় বা একটি ওষুধ হতে পারে।”

একসাথে আমরা পারি—দুর্যোগ পেরিয়ে নতুন আশার পথে হাঁটতে।
সদয় হোন, সচেতন হোন, সহানুভূতিশীল হোন।

🟢 সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ) :

প্রশ্ন ১: ফেনীতে আবার বন্যা কেন দেখা দিয়েছে?
উত্তর: ফেনী অঞ্চলে টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির কারণে এই বন্যা দেখা দিয়েছে। বাঁধ দুর্বলতা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতাও বড় কারণ।

প্রশ্ন ২: ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা এখন কেমন পরিস্থিতিতে আছেন?
উত্তর: অনেকে বাড়িঘর হারিয়েছেন, আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট রয়েছে।

প্রশ্ন ৩: কী ধরনের ত্রাণ সাহায্য সবচেয়ে জরুরি?
উত্তর: শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, শিশুদের জন্য দুধ ও ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং চিকিৎসাসেবা এখন সবচেয়ে জরুরি।

প্রশ্ন ৪: স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা কীভাবে কাজ করছেন?
উত্তর: প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যৌথভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৫: দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় কী করা উচিত?
উত্তর: টেকসই বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, আধুনিক পূর্বাভাস ব্যবস্থা ও স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।

✍️ আপনার মন্তব্য লিখুন:

আপনার নাম ও মতামত দিন। গঠনমূলক আলোচনা আমরা স্বাগত জানাই।







কল্পকথা ৩৬০

Kalpakatha 360 আপনার জীবনের অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাবে। ভালোবাসা, সমাজ, নস্টালজিয়া—সবকিছু এখানে আপনার জন্য লেখা। এই ব্লগে আপনি পাবেন গল্প, কবিতা ও চিন্তা, যা আপনার হৃদয় ও মনের সঙ্গে কথা বলবে। আপনার কল্পনা, আপনার গল্প এখানে অমর হবে।

Post a Comment

🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।

শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com

Previous Post Next Post