অন্তঃআলো – ভিতরের আলো, যা সব প্রতিকূলতার মাঝেও জ্বলে।

অন্তঃআলো – ভিতরের আলো, যা সব প্রতিকূলতার মাঝেও জ্বলে। গল্পে উঠে এসেছে জীবনের বিপর্যয়, মানসিক প্রতিকূলতা ও ফিরে আসার বাস্তব অনুপ্রেরণা। প্রতিকূলতার গল্পে উঠে এসেছে জীবনের অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসার অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা।

গল্পের শুরুতে আমরা দেখি কিভাবে মানসিক প্রতিকূলতা একজন মানুষকে ভেঙে দিলেও আবার গড়ে তুলতে পারে—নাসরিনের গল্প তার প্রতীক।

গল্পের শেষে সৌমেনের ডিপ্রেশন থেকে ফিরে আসার সত্য ঘটনা আমাদের শেখায়, মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলার নয়, উপলব্ধির বিষয়।

এই গল্পটি পাঠককে উদ্বুদ্ধ করে নিজের জীবনের প্রতিকূল সময়কেও গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে। প্রতিকূলতা মানে থেমে যাওয়া নয়, বরং আবার শুরু করার সুযোগ। প্রতিটি হারানোর গল্পেই ফিরে আসার সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। জীবন থেমে যায় না—আলোও একদিন ঠিক ফিরে আসে। জীবন এক অদ্ভুত পথ। কখনো সে হাতে দেয় রোদ, কখনো কুড়িয়ে আনে অন্ধকার। আমরা হাঁটি, বারবার হোঁচট খাই, কিন্তু থেমে যাই না। এই না থেমে চলার মধ্যেই একেকটা গল্প জন্ম নেয়—প্রতিকূলতার গল্প। আর সেই প্রতিকূলতার মাঝেই লুকিয়ে থাকে জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য।

প্রতিকূলতা মানে কি?

প্রতিকূলতা মানে কেবল দুঃখ নয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে নিজের অস্তিত্বকেই টিকিয়ে রাখার লড়াই শুরু হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা কোনো না কোনো রকমের প্রতিকূলতার ভেতর দিয়েই যাচ্ছি। কখনো সেটা বাহ্যিক, কখনো মানসিক। ছোটবেলায় হয়তো আপনার সঙ্গী ছিল অভাব, হয়তো বাবা-মা’র ঝগড়া, হয়তো স্কুলে অন্যদের দ্বারা বুলিং। বড় হয়ে প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরি না পাওয়া, সমাজের প্রত্যাখ্যান, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা—সবই প্রতিকূলতার রূপ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রতিকূলতা আমাদের গড়ে না ভেঙে দেয়?

মনের প্রতিক্রিয়া: ভেঙে পড়া না গড়ে ওঠা?

প্রতিকূলতা দুই রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করে—কেউ হারিয়ে যায়, আবার কেউ ভীষণভাবে জেগে ওঠে। ট্রমা (Trauma) যেমন মানুষকে বিষণ্ন করে তোলে, তেমনি Post-Traumatic Growth (PTG) মানুষকে করে তোলে শক্তিশালী, দায়িত্ববান এবং উপলব্ধিসম্পন্ন।

এখানেই আসে মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক—Resilience বা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানসিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা। এটা জন্মগত নয়, শেখা যায়। আর শেখার প্রথম ধাপ হচ্ছে সচেতনতা—আপনি জানেন আপনি ভেঙে পড়েছেন।

নাসরিনের গল্প: জীবন মানেই যুদ্ধ নাসরিন একটি গার্মেন্টসে কাজ করে। বয়স তিরিশ পেরিয়েছে, কিন্তু চেহারায় যেন চল্লিশ। দুই সন্তানের মা, স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে বছর তিনেক হলো। প্রথমে ভেবেছিল মরেই যাবে। একলা শহরে দুই শিশুকে নিয়ে কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু একদিন ছোট ছেলেটা রাতে জেগে উঠে শুধু বলল, "মা, আমরা না খেয়ে মরবো না তো?" সেই একটি বাক্যে নাসরিন যেন নিজের ভেতরে নতুন আলো খুঁজে পেল। তিন বছর পরে, নাসরিন এখন একজন সুপারভাইজার। রাতে টিউশন করে, ছেলেমেয়েকে স্কুলে দেয়। প্রতিদিন ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে জানালার পাশে বসে বলে, "ভালোবাসা পাইনি, সম্মানও না। কিন্তু আমি হেরেও হার মানিনি।" নাসরিনের মতো মানুষ প্রতিদিন জন্ম নেয়। তারা কাঁদে, ভাঙে, কিন্তু থামে না।

এটাই প্রতিকূলতার প্রকৃত অর্থ—নিজেকে হারিয়ে না ফেলে আবার নতুনভাবে নিজেকে ফিরে পাওয়া। কীভাবে আলো দেখা যায়?

ছোট জয় উদযাপন করুন: একটি চাকরি পাওয়া, একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, অথবা আজ একটু কম কষ্টে দিন পার করা—সবই অর্জন। নিজের সাথে কথা বলুন: নিজেকে সময় দিন, যা ভাবছেন তা লিখে রাখুন। সহানুভূতিশীল হোন নিজের প্রতি: ভুল করা মানেই আপনি ব্যর্থ নন।

সাহায্য চেয়ে নিন: বন্ধু, কাউন্সেলর, অথবা একজন শুভানুধ্যায়ী—কারোর সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। প্রতিকূলতা আমাদের আয়না দেখায় আমরা জানি না আমরা কতটা শক্তিশালী, যতক্ষণ না জীবন আমাদের সেই শক্তি ব্যবহার করতে বাধ্য করে। প্রতিকূলতা আমাদের ভাঙে না, বরং আমাদের নিজেদের নতুন করে চিনতে শেখায়। অন্যদিকে যখন হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসা যায় আমরা অনেক সময় ভাবি—সব শেষ।

জীবন আর আগের মতো হবে না। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, কোনো কিছুই চিরকাল এক রকম থাকে না। আপনি আজ ভেঙে পড়েছেন, মানে এই নয় যে আপনি চিরকাল ভাঙাই থাকবেন। চলুন, দেখি ফিরে আসার সেই গল্পটা কেমন হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য: অবহেলা নয়, উপলব্ধি দরকার বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা এখনও কম। বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ট্রমা—এই শব্দগুলোকে এখনো দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। অথচ এটা ঠিক, আপনি মানসিকভাবে ক্লান্ত হলে আপনার শরীর, সম্পর্ক ও কর্মজীবন সবকিছুতে তার প্রভাব পড়ে।

একজন মানুষের জীবন শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, ভেতরের যাত্রাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মন ভালো না থাকলে, সফলতার অর্থও অর্থহীন হয়ে যায়।

সৌমেনের ফিরে আসা সৌমেন একজন কর্পোরেট চাকরিজীবী। সিজনাল ডিপ্রেশন তাকে এমনভাবে গ্রাস করেছিল, যে ছুটি নিয়েও ঘর থেকে বের হতেন না। দিনের পর দিন কাটত ঘরের অন্ধকারে। একদিন আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়ে এক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধুটি মনোচিকিৎসক। কথা বলতে বলতে সৌমেন বোঝে, তার ভেতরে সমস্যা আছে এবং সেটা মানা দুর্বলতা নয়, বরং সাহস। চিকিৎসা শুরু হয়, ধীরে ধীরে সৌমেন ঘর থেকে বের হতে শুরু করে।

আজ সে একজন মেন্টর, কর্পোরেট ট্রেইনার এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করছে। ফিরে আসার ধাপগুলো: প্রতিদিন কী ভাবলেন, কী পেলেন, কী হারালেন—সব লিখে রাখুন।

মেডিটেশন ও ধ্যান: মনের স্থিরতা ফিরে পেতে শেখা যায়। পরিবেশ পরিবর্তন: মাঝেমধ্যে স্থান ও পরিবেশ পাল্টান। মন নতুন কিছু গ্রহণ করে।

ছোট অভ্যাস গড়ে তুলুন: সকালে হাঁটা, জলপান, বই পড়া—এই অভ্যাসগুলো আপনাকে নতুন আলো এনে দিতে পারে। আপনি একা নন প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোনো না কোনোভাবে প্রতিকূলতা আছে। কেউ প্রকাশ করে, কেউ চেপে রাখে। কিন্তু জেনে রাখুন, আপনি একা নন। প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া মানুষই একদিন ফিরে আসতে পারে, যদি সে চায়। আর যদি আশেপাশে কেউ থাকে, যে তার হাতে একটু আলো দিতে পারে। ফিরে আসাই জীবনের সৌন্দর্য যারা পড়ে গিয়ে উঠেছে, তারা কখনোই আগের মতো থাকে না। তারা হয়ে ওঠে আগুনে পোড়া স্বর্ণের মতো—পরিষ্কার, শক্তিশালী এবং উজ্জ্বল।

আপনার জীবনও একদিন আলোয় ভরে যাবে। শুধু থেমে যাওয়া নয়, আবার হাঁটুন। আর মনে রাখুন—প্রতিকূলতার পরে সবসময়ই আশার সম্ভাবনা থাকে।

📩 পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা: এই গল্প হয়তো আপনার নয়, কিন্তু আপনার মতো কারো। ভালো লাগলে শেয়ার করুন, হতে পারে আপনি কারো জন্য আলো হয়ে উঠবেন। আরও সত্যিকারের জীবনের গল্প পড়তে ভিজিট করুন –

👉 https://kalpakatha360.blogspot.com/ আপনার মতামত আমাদের কাছে অমূল্য। মন্তব্য করুন, গল্প বলুন, পাশে থাকুন।

Previous Post Next Post
Love Poems
Health Tips
Food & Recipes
Read Books
Job Circulars
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...