গণতন্ত্রের গ্যাঞ্জাম ও গরিবের গলাধঃকরণ

ঢাকায় বিক্ষোভে রাস্তা বন্ধ, রোগীর ভোগান্তি, গণতন্ত্রের নামে জনদুর্ভোগ! পড়ুন এক ব্যঙ্গাত্মক রম্যরচনায় দিনের ঘটনা।

ঢাকার রাজপথে আজ ছিল এক বিশাল বিক্ষোভের দিন—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হাজারো মানুষ নেমে আসে সড়কে। তবে এই রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল বলি হয়েছে সাধারণ মানুষ। অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যাওয়ার পথ বন্ধ, অফিসগামী কর্মচারীরা আটকা, রিকশা ও গণপরিবহন অচল। ব্লগের কল্পিত চরিত্র আবু হাশেম ভাই—একজন হার্টের রোগী—এই জনদুর্ভোগের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। রাজনৈতিক স্লোগানের শব্দ ঢেকে দিয়েছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, আর জনগণের কণ্ঠ হারিয়ে গেছে নেতাদের ভাষণে। এই রম্যরচনাটি রাজনৈতিক বাস্তবতার ব্যঙ্গাত্মক চিত্র তুলে ধরেছে। এখানে আছে ক্রিকেট, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ, এবং হাসপাতালের সিট স্ক্যান। পড়ুন এই তথ্যবহুল ও রম্যভঙ্গির ব্লগ পোস্ট, যেখানে কল্পনার চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে আমাদের নিত্যকার ভোগান্তির নির্মম বাস্তবতা।

🚌 “মিছিল মিছিল খেলা”: ঢাকার রাস্তায় কল্পনার রাজনীতি ও জনগণের কান্না
ঢাকার সকালটা শুরু হয়েছিল নিরীহ এক ঠাণ্ডা চা ও বিস্কুট দিয়ে, কিন্তু শেষ হলো অ্যাম্বুলেন্সের হুইসেল, ভাঙা রিকশার কান্না আর রাস্তায় ধোঁয়া ধোঁয়া “গণতন্ত্র” দিয়ে।
“গণতন্ত্র চাই-নির্বাচন চাই-ভোট চাই”—স্লোগান উঠলো।
“তাও চাই, কিন্তু আগে তো পেটে ভাত দে ভাই,”—বলে উঠলো মুন্সি আব্দুল হাকিম, যার রিকশাটা বিক্ষোভে জ্বলে গেছে।

🚧 রাস্তার নাম ‘রুদ্ধ পাড়া’, আর ব্রীজের নাম ‘বাধা গেট’
প্রিয় পাঠক, জানলে আপনার গায়ে কাঁটা দিবে—আজকের ঢাকায় অ্যাম্বুলেন্স ছিল, কিন্তু রাস্তা ছিল না। গাড়ি ছিল, কিন্তু গন্তব্য ছিল না। আর ছিল এক জন, আমাদের কল্পনার চরিত্র আবু হাশেম ভাই—বয়স ষাট, হার্টে ব্লক, চোখে চশমা আর পকেটে প্রেসক্রিপশন।

সকাল ৯টার সময় বের হলেন ধানমণ্ডি থেকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের দিকে।
কিন্তু!
“নির্বাচন চাই, তত্ত্বাবধায়ক চাই” স্লোগানে রাস্তায় এমন অবরোধ, যেন হাশেম ভাই চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন না—যুদ্ধে যাচ্ছেন।
তিনি একটি সিএনজি পেলেন, ৩০০ টাকা চুক্তি করলেন।
১০ মিনিট পরই গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল শাহবাগ মোড়ে।
চালক বলল,
“ভাইয়া, আমি মিছিলের মধ্যে মরি না, আপনি চাইলে হাঁটতে পারেন।”
হাঁটা মানে দুই কিলোমিটার… হার্টের রোগী!

👩‍⚕ হাসপাতালের রূপকথা ও সিটি স্ক্যানের দুঃস্বপ্ন
হাশেম ভাই হার মানলেন না। হাঁটলেন। হাঁটতে হাঁটতে গরমে গরমে, ঘামে ঘামে, এক পর্যায়ে ধপাস করে পড়ে গেলেন ফুটপাথে। পাশের ফল বিক্রেতা সালেহা বেগম তাঁকে ধরলেন, দিলেন এক বোতল পানি।
সালেহা বেগম বললেন,
“চাচা, রাস্তা বন্ধ হইলে আপনারা মিছিল করেন না কেন? জনগণের কষ্ট দেখলে নেতারা তো আর হাসপাতালে আসে না।”

🎭 কল্পনার রাজনীতিক চরিত্র:

দোস্ত মঞ্জু ও ভোটের বিজয় সেন রাজনীতির মাঠে আজকের দিনের মূল দুই নায়ক ছিলেন—দোস্ত মঞ্জু, গণমুক্তি ফ্রন্টের স্বঘোষিত তত্ত্বাবধায়ক-বান্ধব নেতা। ওপাশে ভোটের বিজয় সেন, বর্তমান সরকারের গর্বিত গার্ড।

দুই পক্ষই রাজপথে শ্লোগান দেন:
“ গণতন্ত্র চাই
নির্বাচন চাই
ভোট চাই ”
এর মাঝে সাধারণ মানুষ?
তারা গণতন্ত্রকে চিনে না, কিন্তু জানে যে আজ তারা অফিসে পৌঁছাতে পারেনি, হাশেম ভাই হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেননি, আর কলেজছাত্রী কান্তা রেজাল্ট জমা দিতে পারেনি।

🧘 শেষ কথা: "মিছিল যদি মহাসড়ক হয়, তবে মানুষ কোথায় হাঁটবে?"
হাশেম ভাই হাসপাতাল পৌঁছালেন অবশেষে—৪ ঘণ্টা পর।

চিকিৎসক বললেন,
“ভালোই করেছেন বাঁচে গেছেন, তবে আর এক ঘণ্টা দেরি হলে কিছু বলা যেত না।”
আমরা বলি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করি।
কিন্তু গণতন্ত্র তো বাসে ওঠে না, সিএনজি চাপে না, ফুটপাথে পড়ে থাকা হাশেম ভাইকে চিনে না।

📣 আপনি কী ভাবেন?
এই আন্দোলন কি সত্যিই জনগণের জন্য?
নাকি জনগণের পিঠেই এর ছুরিটা চালানো হয়?


আপনি যদি এই ব্লগটি পড়ে থাকেন, দয়া করে হাশেম ভাইদের কথা মনে রাখুন। কারণ প্রতিটি বিক্ষোভের পিছনে থাকে শত শত জীবনের ছেঁড়া চিঠি—যারা ভোট দিতে চায় না, কেবল বাঁচতে চায়।
Previous Post Next Post
Love Poems
Health Tips
Food & Recipes
Read Books
Job Circulars
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...