রিজিক আর রূপ: নারী-পুরুষের চিন্তায় বিপর্যয় নাকি বাস্তবতা?

📌 "বিয়ে, রিজিক ও সমাজ: আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির এক বিশ্লেষণ"

“রিজিক দেখে আসা নারী, সৌন্দর্য খোঁজে পুরুষ" একটি সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ”

বিগত কয়েক দশকে সমাজে নারী ও পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। এক সময় নারী সংসারে রিজিকের বারাকাহ নিয়ে আসতেন; আজ তিনি রিজিকের নিশ্চয়তা দেখতে চান। একইভাবে, আগেকার পুরুষরা বিবাহে উত্তম চরিত্র ও আখলাককে গুরুত্ব দিতেন, আজ সৌন্দর্য ও সামাজিক মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এই বদলে যাওয়া মানসিকতা শুধু ব্যক্তি সম্পর্কেই নয়, সমাজের গভীরে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।

একটা সময় ছিল, বাঙালি নারীরা সংসারে রিজিক নিয়ে আসতো। সেটি মানসিক শান্তি হোক কিংবা ভাগ্যের আলো, নারী নিজ হাতে রান্না করা ভাতের গন্ধে এক সংসারের প্রাণ জাগাতো। তার চোখে স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা, সন্তানদের জন্য ত্যাগ, আর সৃষ্টিকর্তার প্রতি নির্ভরতা ছিল।

আজ?

নারী রিজিক নিয়ে আসে না—সে রিজিক "দেখে" আসে।

মনের শান্তি, ভালোবাসা, বিশ্বাস—এই বিষয়গুলো এখন আর বিবেচনায় থাকে না অনেকের। তার চেয়ে বেশি জরুরি এখন:

বেতন কত?

বাসা ফ্ল্যাট না বাড়ি?

ছেলের মা-বাবা আলাদা থাকে তো?

বিদেশে যাওয়ার সুযোগ আছে তো?

এটা কি খারাপ?

না।

প্রশ্ন হচ্ছে—এই পরিবর্তন আমাদের কিসে রূপান্তর করছে?

আগেকার নারীর চোখে জীবন

আগেকার নারীরা জীবনকে দেখতেন এক ধরনের আধ্যাত্মিক দায়িত্ব হিসেবে। “রিজিক” ছিল শুধু ভাত কাপড় নয়—বরং সেটি ছিল সুস্থ সম্পর্ক, কল্যাণকর সন্তান, ও আধ্যাত্মিক স্থিতি।

তাঁদের ধারণা ছিল—“পুরুষ ভালো হলে, রিজিক আপনিই আসবে।”

রাতের শেষ প্রহরে দোয়া, ফজরের সময় ঘুম ভাঙা, আর কপালে তেল দেওয়া স্বামীর পেছনে থাকা নারী ছিল এক নীরব যোদ্ধা।

এখনকার নারীর চোখে জীবন

এখনকার নারী স্বাধীন, সচেতন, উচ্চশিক্ষিত। সে চায় সুরক্ষা, আর্থিক নিশ্চয়তা ও স্বস্তি। কিন্তু আজকাল অনেকেই রিজিককে মনে করে “প্রাপ্তি”—যেটা আগে থেকেই নিশ্চিত থাকা দরকার। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পর্ক একটি বিনিয়োগে পরিণত হয়—ফল না মিললে ছাড়ার মতো।

এখন অনেকেই বলে—

“ছেলেটা ভালো হলেও কি হবে, ইনকাম যদি কম হয়?”

“ভালোবাসা দিয়ে কি EMI চলে?”

এই কথাগুলো বাস্তব—তবে বাস্তবতা ও হৃদয়ের মাঝে একটি সেতুবন্ধন প্রয়োজন, নইলে হৃদয় শুকিয়ে যায়।

পুরুষও বদলেছে!

আগেকার পুরুষ কী খুঁজতো?

উত্তম আখলাক।

সততা, নম্রতা, ধার্মিকতা—এগুলো ছিলো কন্যাপক্ষের বড় গুণ। বাবারা খোঁজ করতেন—“মেয়েটি নামাজ রোজা করে তো?” “স্বভাব নম্র তো?”

স্বামী হবার আগে পুরুষ হবার চেষ্টা ছিল পুরুষের মধ্যে।

এখনকার পুরুষ কী দেখে?

রূপ

ফিগার

মেয়ের বাবার স্ট্যাটাস

যৌতুক না হলেও “সেটআপ” কেমন?

অনেকে বলেন—“ভালো মেয়ে তো অনেক, কিন্তু চাকরির মেয়েই চাই।”

কেউ বলেন—“বাসায় ফ্রিজ, এসি আছে তো?”

এক সময় পাত্রের মা বলতেন—“বাড়ির মেয়ে কি কষ্ট সহ্য করতে পারবে?”

এখন বলেন—“শরীর দেখে তো মনে হয় জিম করে, ভালোই লাগবে বউ হিসেবে।”

প্রশ্ন হলো—আমরা কোথায় যাচ্ছি?

নারী যখন রিজিক "দেখে" আসে, আর পুরুষ যখন সম্পর্ককে "ইনভেস্টমেন্ট" ভাবে, তখন সম্পর্ক আর দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

পাত্রপাত্রীর CV দেখার আগে যদি আমরা হৃদয়ের আখলাক আর ভালোবাসা ধারণক্ষমতা দেখি, তবেই নতুন প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পাবে।

কিছু পরিসংখ্যান ও গবেষণা (সূত্র: নতুন সমাজচিন্তা জরিপ ২০২৪)

৭২% বিবাহবিচ্ছেদ শুধুমাত্র “আর্থিক প্রত্যাশা” পূরণ না হওয়ায়।

৬৩% নারী মনে করে পাত্রের ইনকাম ৮ অঙ্কের না হলে বিবাহের চিন্তা করা যায় না।

৫৮% পুরুষ বলে, সৌন্দর্য প্রাধান্য পায় চরিত্রের চেয়ে।

সমাজ বদলেছে—তাতে সমস্যা নেই।

কিন্তু হৃদয়ের ভিত যদি নরম না থাকে, তা হলে জীবনের সম্পর্কগুলো শুকিয়ে যাবে।

রিজিক আসমান থেকে আসে, মানুষ শুধু বাহক। নারীর কাজ রিজিক ডেকে আনা, পুরুষের কাজ সেই রিজিকের হক আদায় করা।

আসুন—আবার মানুষ খুঁজি। অর্থ নয়, সৌন্দর্য নয়—মানুষ খুঁজি।

Previous Post Next Post
Love Poems
Health Tips
Food & Recipes
Read Books
Job Circulars
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...