বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প, যা দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি, বর্তমানে এক নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ২৫ সালের ৭ই জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক বাংলাদেশের সকল পণ্যের উপর ৩৫% পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা, যা ১লা আগস্ট, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে, এই চ্যালেঞ্জকে আরও তীব্র করেছে । পূর্বের গড় ১৫% শুল্কের তুলনায় এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করার হুমকি দিচ্ছে এবং রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর গভীর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে । যদিও এই খাতটি ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ এবং জ্বালানি সংকটসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রতিকূলতার মধ্যেও অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে , নতুন শুল্কের কারণে জরুরি ও বহুমুখী কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আরএমজি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি, মার্কিন শুল্কের প্রভাব বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা, শিল্প অভিযোজন, পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতি সংস্কারের একটি বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।
১.১. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের গুরুত্ব
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক অপরিহার্য স্তম্ভ । এটি দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১% থেকে ৮৪% এর জন্য দায়ী এবং প্রায় ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন মানুষকে কর্মসংস্থান প্রদান করে, যাদের অধিকাংশই নারী ।
১.২. প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ও পরিধি
এই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য হলো সম্প্রতি ঘোষিত ৩৫% মার্কিন শুল্কের আলোকে বাংলাদেশের আরএমজি শিল্পের একটি গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করা। এতে এই শুল্কের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মূল্যায়ন করা হবে এবং প্রতিকূল প্রভাব মোকাবিলা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য কৌশলগত প্রতিক্রিয়া ও নীতিগত সুপারিশমালা প্রস্তাব করা হবে।
১.৩. বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট
২০২৫ সাল বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা দ্বারা চিহ্নিত, যেখানে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ভোক্তা আস্থার ওঠানামা ফ্যাশন শিল্পে প্রভাব ফেলছে । অভ্যন্তরীণভাবে, বাংলাদেশের আরএমজি খাত ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, জ্বালানি সংকট, ডলারের ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ব্যয়ের মতো চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে 。
২. বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান চিত্র
২.১. বৈশ্বিক অবস্থান ও রপ্তানি প্রবণতা
বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে, যার পিছনে রয়েছে কেবল চীন । ২০২৪ সালে, বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানি ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের ৩৫.৮৯ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৭.২৩% স্থিতিস্থাপক প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে 。 ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) সামগ্রিক রপ্তানি কর্মক্ষমতা আরএমজি খাতের ৩৯.৩৫ বিলিয়ন ডলার আয় নির্দেশ করে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৮.৮৪% এর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে । ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরএমজি রপ্তানি ৭.০৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭% বেশি । ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজারেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি ৩.৬৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭.০% বেশি । জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং রাশিয়ার মতো অ-ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে রপ্তানি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৬.৭৯% বৃদ্ধি পেয়ে ৬.০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে 。
২.২. অর্থনীতিতে অবদান ও কর্মসংস্থান
আরএমজি খাত প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষকে কর্মসংস্থান প্রদান করে , কিছু প্রতিবেদনে এই সংখ্যা ৫ মিলিয়ন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে । ঐতিহাসিকভাবে, নারীরা এই কর্মীবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (দশ বছর আগে ৮০%) গঠন করত, যদিও বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ৬০% এ নেমে এসেছে ।
প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে আরএমজি খাতে সামগ্রিক কর্মসংস্থান ৩০.৫৮% কমে গেছে, যা মূলত এন্ট্রি-লেভেলের পদগুলোকে প্রভাবিত করেছে । এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে, শিল্পটি মূল্য এবং রপ্তানি আয়ের দিক থেকে বৃদ্ধি পেলেও, এটি শ্রম-নির্ভরতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং প্রতি কর্মী উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য "ন্যায্য রূপান্তর" কৌশল (Just Transition strategies) গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
২.৩. অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জসমূহ
আরএমজি খাত বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন:
শ্রমিক অসন্তোষ ও মজুরি: ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে শ্রমিক অসন্তোষ এবং ধর্মঘট একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ । বর্তমান ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১২,৫০০ টাকা (প্রায় ১১৩ ডলার), যা আনুমানিক ৪৬০ ডলারের জীবনযাত্রার ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম ।
জ্বালানি সংকট ও পরিচালন ব্যয়: গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয় বাড়াচ্ছে ।
ডলারের ঘাটতি ও ব্যাংকিং সমস্যা: ডলারের ঘাটতি এবং তারল্য সংকট আমদানির জন্য লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খুলতে অসুবিধা সৃষ্টি করছে । উচ্চ ব্যাংক সুদের হার (১৪-১৫%) আর্থিক চাপ বাড়ায় ।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে ।
কমপ্লায়েন্স ও টেকসইতার দাবি: আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ক্রমবর্ধমানভাবে কমপ্লায়েন্স এবং টেকসই উৎপাদন অনুশীলনের জন্য কঠোর দাবি আরোপ করছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ প্রধান বাজারগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে ।
আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: বাংলাদেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোর মতো উদীয়মান বাজার থেকে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে ।
৩. ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক: একটি গভীর বিশ্লেষণ
৩.১. শুল্ক ঘোষণার বিস্তারিত ও সময়রেখা
২০২৫ সালের ২রা এপ্রিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশী পণ্যের উপর ৩৭% বাণিজ্য শুল্ক ঘোষণা করে । আলোচনার জন্য ৯০ দিনের একটি বিরতি দেওয়া হয়েছিল, যা ২০২৫ সালের ৯ই জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল । ৭ই জুলাই, ২০২৫ তারিখে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশী পণ্যের জন্য ৩৫% এর একটি নতুন হার ঘোষণা করেন, যা ১লা আগস্ট, ২০২৫ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে । এই ৩৫% শুল্ক বিদ্যমান খাত-নির্দিষ্ট শুল্কের পাশাপাশি বাংলাদেশী পণ্যের সকল বিভাগে প্রযোজ্য হবে । বাংলাদেশী পণ্যের উপর পূর্বের গড় শুল্ক ছিল প্রায় ১৫%, যার অর্থ নতুন শুল্ক ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ করবে ।
৩.২. যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কারণ ও যুক্তি
ট্রাম্প শুল্ক আরোপের প্রাথমিক কারণ হিসেবে "শুল্ক এবং অ-শুল্ক বাধা" এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী "দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা" উল্লেখ করেছেন । ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬.২ বিলিয়ন ডলার । ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন যে ৩৫% হার "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার চেয়ে অনেক কম" ।
৩.৩. প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে শুল্কের তুলনা
ভিয়েতনাম সফলভাবে তার শুল্ক ৪৬% থেকে মাত্র ২০% এ হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর সকল শুল্ক (শূন্য শুল্ক) বাদ দিয়ে । কম্বোডিয়া ৩৬% শুল্কের মুখোমুখি, এবং মিয়ানমার ৪০% শুল্কের মুখোমুখি । বাংলাদেশের ৩৫% হার উল্লেখযোগ্যভাবে প্রথম ধাপের ১৪টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্কের একটি ।
৪. শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব ও ঝুঁকি
৪.১. মূল্য প্রতিযোগিতা এবং বাজার অংশীদারিত্বে প্রভাব
৩৫% শুল্ক মার্কিন বাজারে বাংলাদেশী পোশাকের মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে । এই তীব্র বৃদ্ধি রপ্তানির পরিমাণ হ্রাস করতে পারে, কারণ মার্কিন ক্রেতারা কম শুল্কের দেশগুলোতে, যেমন ভিয়েতনাম (২০% শুল্ক), অর্ডার স্থানান্তর করতে পারে ।
৪.২. রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস
ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নতুন শুল্ক, ভারতে চালানের সম্ভাব্য হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ঘাটতির সাথে মিলিত হয়ে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানিতে ২ বিলিয়ন ডলারের পতন ঘটাতে পারে ।
৪.৩. কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য এবং সামাজিক পরিণতি
এই শুল্ক বৃদ্ধির বোঝা পোশাক নির্মাতাদের এবং তাদের দ্বারা নিযুক্ত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের উপর, যাদের অধিকাংশই নারী, ভারীভাবে পড়বে । এই পরিস্থিতি ধীর প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায় । অনেক কারখানা, বিশেষ করে যারা মার্কিন গ্রাহকদের উপর নির্ভরশীল বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই), তাদের টিকে থাকতে অসুবিধা হতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
৪.৪. ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা
ফ্যাশন শিল্পে "অনিশ্চয়তা", যা ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্থানের কারণে ইতিমধ্যেই বেড়েছে, নতুন শুল্কের কারণে আরও তীব্র হয়েছে । আলোচনার সময় বাংলাদেশী আলোচকদের অনুকূল ফলাফল অর্জনে ব্যর্থতার ধারণা ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমিয়ে দিতে পারে ।
৪.৫. সরবরাহ শৃঙ্খলে সম্ভাব্য পরিবর্তন
শুল্কের কারণে ক্রমবর্ধমান ব্যয় মার্কিন ক্রেতাদের কম শুল্কের দেশগুলোতে অর্ডার স্থানান্তর করতে উৎসাহিত করতে পারে । তবে, মৌলিক এবং মধ্য-মানের পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য এবং বৃহৎ উৎপাদন ক্ষমতা কিছু স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করে 。চীনের নিজস্ব উচ্চ শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে তার অংশীদারিত্বের চলমান ক্ষতি বাংলাদেশকে বর্ধিত অর্ডার এনে দিতে পারে ।
৫. বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ও কৌশলগত পদক্ষেপ
৫.১. সরকারের কূটনৈতিক ও বাণিজ্য আলোচনা
বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সাথে "এক-এক আলোচনা" এর মাধ্যমে শুল্কের আরও হ্রাস নিশ্চিত করার বিষয়ে আশাবাদী । বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং সংলাপের সুবিধার্থে, বাংলাদেশ ৬২৬টি পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ১১০টি পণ্যের উপর থেকে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে । সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে তুলা, খাদ্যশস্য, সামরিক সরঞ্জাম এবং সম্ভাব্য বোয়িং বিমান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, কিছু বিশেষজ্ঞ এবং শিল্প নেতা বাংলাদেশের আলোচনার দক্ষতার সমালোচনা করেছেন, উল্লেখ করেছেন যে প্রস্তাবিত প্রস্তাবগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় ছিল না, যার ফলে প্রাথমিক ৩৭% থেকে মাত্র ২% ছাড় পাওয়া গেছে ।
৫.২. শিল্পের অভিযোজন ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা
বাংলাদেশ মৌলিক এবং মধ্য-মানের পোশাক আইটেম উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা এমন কম দামে সরবরাহ করে যা অন্য কয়েকটি দেশ মেলাতে পারে না । আমেরিকান খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলো প্রায়শই এই আইটেমগুলো এত কম দামে সংগ্রহ করে যে তারা ৩৫% শুল্ক শোষণ করতে পারে এবং এখনও লাভজনকতা বজায় রাখতে পারে 。২রা এপ্রিল শুল্ক ঘোষণার পর থেকে, একটি নতুন ব্যয়-ভাগাভাগি মডেল তৈরি হয়েছে, যেখানে সরবরাহকারী, কাপড় প্রস্তুতকারক এবং খুচরা বিক্রেতারা প্রত্যেকে শুল্কের একটি অংশ বহন করে ।
৫.৩. পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ
ঐতিহ্যবাহী বাজার (উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ) এবং সীমিত পণ্যের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ এখন অপরিহার্য । উদ্যোক্তারা ক্রমবর্ধমানভাবে মূল্য সংযোজিত পণ্যের উপর মনোযোগ দিচ্ছেন এবং নতুন বাজার অন্বেষণ করছেন । অ-ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে পর্যবেক্ষণকৃত প্রবৃদ্ধি এই কৌশলের কার্যকারিতা নির্দেশ করে।
৫.৪. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং দক্ষতা উন্নয়ন
স্বয়ংক্রিয়তা প্রক্রিয়া উন্নত করতে, উৎপাদন বাধা দূর করতে, ডেলিভারি বিলম্ব কমাতে, সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করতে এবং গুণমান উন্নত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বিশ্বব্যাপী স্বয়ংক্রিয়তার দিকে পরিবর্তন বাংলাদেশের কর্মীবাহিনীকে উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পুনঃদক্ষতা প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে ।
৫.৫. নীতিগত সংস্কার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ব্যবসা সহজীকরণ
দুর্নীতি হ্রাস, কাস্টমস ও কর সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান এবং বিদ্যুৎ/জ্বালানি শুল্কের যুক্তিসঙ্গতকরণ প্রতিযোগিতা সক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ । নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ, পূর্ণ ব্যাংকিং সহায়তা, অসুস্থ কারখানাগুলোকে বিশেষ সহায়তা এবং একটি বাস্তবসম্মত কারখানা প্রস্থান নীতি (exit policy) টিকে থাকা ও প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য । প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলোচনা ত্বরান্বিত করা অপরিহার্য । ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংস্কার, যার মধ্যে বাণিজ্য ব্যবস্থার সরলীকরণ, শুল্ক হ্রাস, অ-শুল্ক বাধা কমানো এবং আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সুবিন্যস্ত করা, বাংলাদেশের আলোচনার অবস্থানকে শক্তিশালী করবে । কার্যকর বন্দর পরিচালনা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সুবিন্যস্ত লজিস্টিকসের মতো অবকাঠামো এবং ইউটিলিটি সমস্যাগুলো জরুরিভাবে সমাধান করা অপরিহার্য ।
৫.৬. শ্রম অধিকার, কমপ্লায়েন্স এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড
আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ক্রমবর্ধমানভাবে কঠোর কমপ্লায়েন্স এবং টেকসইতার মানদণ্ড দাবি করছে, যার মধ্যে পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন এবং নৈতিক শ্রম অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে । রানা প্লাজা ধসের পর শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তায় অপর্যাপ্ত অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশের জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস) বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করা হয়েছিল । অতীতের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশ শ্রমিক নিরাপত্তা এবং কমপ্লায়েন্সে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা একটি দায়িত্বশীল সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের বিশ্বব্যাপী সুনামকে শক্তিশালী করে 。
৬. উপসংহার ও সুপারিশমালা
৬.১. সার্বিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
৩৫% মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের আরএমজি খাতের জন্য একটি গুরুতর অর্থনৈতিক আঘাত, যা এর মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং সম্ভাব্যভাবে রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । তবে, মৌলিক এবং মধ্য-মানের পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের অন্তর্নিহিত শক্তি, মার্কিন আমদানিকারকদের কিছু ব্যয় শোষণ করার ক্ষমতা এবং চীন থেকে চলমান পরিবর্তনের সুযোগ কিছু স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করে ।
৬.২. নীতি নির্ধারক, শিল্প মালিক এবং অন্যান্য অংশীজনদের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা
সরকারের (নীতি নির্ধারকদের) জন্য:
জরুরি কূটনৈতিক তৎপরতা: মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সাথে "এক-এক আলোচনা" জোরালোভাবে চালিয়ে যাওয়া এবং বাণিজ্য বাধা ও পারস্পরিকতা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগগুলো মোকাবেলা করে একটি আরও আকর্ষণীয় ও ব্যাপক প্রস্তাব উপস্থাপন করা ।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলোচনা ত্বরান্বিত করা: ঐতিহ্যবাহী বাজারের বাইরে প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া ।
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংস্কার: ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংস্কার বাস্তবায়ন করা, যার মধ্যে বাণিজ্য ব্যবস্থার সরলীকরণ, শুল্ক হ্রাস, অ-শুল্ক বাধা কমানো এবং আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সুবিন্যস্ত করা অন্তর্ভুক্ত ।
অবকাঠামো ও ইউটিলিটি: জরুরিভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সমস্যাগুলো সমাধান করা, যার মধ্যে কার্যকর বন্দর পরিচালনা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সুবিন্যস্ত লজিস্টিকস নিশ্চিত করা অন্তর্ভুক্ত ।
এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি: এলডিসি উত্তরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করা, নীতিগত পূর্বাভাসযোগ্যতা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, ডিজিটাল শাসন এবং আইনি সংস্কারের উপর মনোযোগ দিয়ে একটি আরও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করা ।
আর্থিক সহায়তা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) সহ অসুস্থ বা সংগ্রামরত কারখানাগুলোকে লক্ষ্য করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা ।
শ্রম সম্পর্ক: একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ ন্যূনতম মজুরি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করে এবং শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে শ্রম খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ।
শিল্প মালিক এবং সমিতিগুলোর (বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ইত্যাদি) জন্য:
পণ্য বহুমুখীকরণ ও মূল্য সংযোজন: মৌলিক তুলা-ভিত্তিক পোশাকের বাইরে উচ্চ-মূল্য, বৈচিত্র্যময় পণ্যের দিকে মনোযোগ স্থানান্তর করা ।
বাজার বহুমুখীকরণ: অ-ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে সক্রিয়ভাবে অন্বেষণ ও প্রসারিত করা ।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও স্বয়ংক্রিয়তা: উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, ব্যয় কমাতে এবং দক্ষতা উন্নত করতে উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি এবং স্বয়ংক্রিয়তায় বিনিয়োগ করা ।
কর্মীবাহিনীর দক্ষতা উন্নয়ন: নতুন প্রযুক্তি এবং উচ্চ-মূল্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শ্রমিকদের জন্য শক্তিশালী প্রশিক্ষণ এবং পুনঃদক্ষতা প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা ।
কমপ্লায়েন্স ও টেকসইতা শক্তিশালী করা: কমপ্লায়েন্স, নৈতিক শ্রম অনুশীলন এবং পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রচুর বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা।
সহযোগিতা: সরকারের, নীতি নির্ধারকদের এবং অন্যান্য অংশীজনদের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলা ।
আন্তর্জাতিক ক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য:
যৌথ দায়িত্ব: শুল্কের প্রভাব প্রশমিত করার ক্ষেত্রে যৌথ দায়িত্ব স্বীকার করা এবং অব্যাহত ব্যস্ততা ও ন্যায্য মূল্যের মাধ্যমে এটি করা ।
দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি: বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী সোর্সিং প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা, কমপ্লায়েন্স, টেকসইতা এবং শ্রমিক কল্যাণে এর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও ট্রাম্পের শুল্ক: প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আপনার মনে যে প্রশ্নগুলো আসতে পারে, সেগুলোর উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
১. বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের বর্তমান অবস্থান কেমন?
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে, যার পেছনে রয়েছে কেবল চীন । ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানি ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে । ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) মোট আরএমজি রপ্তানি ৩৯.৩৫ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা ৮.৮৪% প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে ।
২. যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি কী এবং কবে থেকে এটি কার্যকর হবে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সকল পণ্যের উপর ৩৫% নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন । এই শুল্ক ১লা আগস্ট, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে । এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের উপর গড় শুল্ক ছিল প্রায় ১৫% ।
৩. যুক্তরাষ্ট্র কেন এই শুল্ক আরোপ করেছে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে বাংলাদেশের "শুল্ক এবং অ-শুল্ক বাধা" এবং দীর্ঘস্থায়ী "বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা" উল্লেখ করেছেন । ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬.২ বিলিয়ন ডলার ।
৪. বাংলাদেশের নতুন শুল্ক হার অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় কেমন?
বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর শূন্য শুল্ক আরোপের বিনিময়ে তাদের শুল্ক ৪৬% থেকে ২০% এ কমাতে সক্ষম হয়েছে । কম্বোডিয়া ৩৬% এবং মিয়ানমার ৪০% শুল্কের মুখোমুখি । প্রথম ধাপের ১৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ৩৫% শুল্ক হার অন্যতম সর্বোচ্চ ।
৫. এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
এই শুল্ক মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস করবে । ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে আরএমজি রপ্তানিতে ২ বিলিয়ন ডলারের পতন হতে পারে । এর ফলে প্রবৃদ্ধি হ্রাস, কর্মসংস্থান কমে যাওয়া এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের উপর এর প্রভাব বেশি পড়বে । অনেক ছোট ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
৬. এই শুল্কের প্রভাব কমাতে বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
বাংলাদেশ সরকার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সাথে "এক-এক আলোচনা" চালিয়ে যাচ্ছে । বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং আলোচনার সুবিধার্থে বাংলাদেশ ৬২৬টি পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ১১০টি পণ্যের উপর থেকে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে । এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্যশস্য এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে ।
৭. বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অন্যান্য প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছাড়াও, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে: শ্রমিক অসন্তোষ ও মজুরি বৃদ্ধি , জ্বালানি সংকট ও ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয় , ডলারের ঘাটতি ও ব্যাংকিং সমস্যা , ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানো , এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের পক্ষ থেকে কঠোর কমপ্লায়েন্স ও টেকসইতার দাবি ।
৮. নতুন মার্কিন শুল্কের অধীনে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানির জন্য ব্যয়-ভাগাভাগি মডেলটি কীভাবে কাজ করে?
শুল্ক ঘোষণার পর থেকে সরবরাহকারী, কাপড় প্রস্তুতকারক এবং খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে একটি নতুন ব্যয়-ভাগাভাগি মডেল তৈরি হয়েছে । এই মডেল অনুযায়ী, সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি পক্ষ শুল্কের একটি অংশ বহন করে, যাতে পুরো ব্যয়ভার কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশের উপর না পড়ে । আমেরিকান খুচরা বিক্রেতারা প্রায়শই মৌলিক পোশাক আইটেমগুলো এত কম দামে (যেমন, একটি ৫ ডলারের টি-শার্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০-৩৫ ডলারে বিক্রি হয়) সংগ্রহ করে যে তারা ৩৫% শুল্ক শোষণ করেও লাভজনকতা বজায় রাখতে পারে ।
৯. পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের জন্য বাংলাদেশের কৌশল কী?
ঐতিহ্যবাহী বাজার (উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ) এবং সীমিত পণ্যের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ এখন অপরিহার্য । উদ্যোক্তারা ক্রমবর্ধমানভাবে উচ্চ-মূল্যের পণ্যের উপর মনোযোগ দিচ্ছেন এবং নতুন বাজার অন্বেষণ করছেন । অ-তুলা আইটেমগুলো অন্বেষণ করাও একটি সুযোগ, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানির ৭০% অ-তুলা পণ্য ।
১০. বাংলাদেশের আরএমজি কর্মীবাহিনীর উপর অটোমেশনের প্রভাব কী?
একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে আরএমজি খাতে সামগ্রিক কর্মসংস্থান ৩০.৫৮% কমে গেছে, যা মূলত এন্ট্রি-লেভেলের পদগুলোকে প্রভাবিত করেছে । এই পরিবর্তনের জন্য "ন্যায্য রূপান্তর" কৌশল (Just Transition strategies) গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে প্রযুক্তিগত উন্নতি শ্রমিকের ন্যায্য আচরণ এবং সুযোগের সাথে আপস না করে ।