এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : আজকের দিনটা তোমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। সারা দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মতো তুমিও আজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছো তোমার দুই বছরের পরিশ্রমের ফল, এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য। মনের ভেতর একসাথে কাজ করছে ভয়, উত্তেজনা আর আশা। ফলাফল যাই হোক না কেন, মনে রেখো, এটা তোমার জীবনের একটা ধাপ মাত্র, শেষ নয়।
এই দিনে তোমাদের পাশে থাকতে, তোমাদের মনের সব দ্বিধা দূর করতে এবং পরবর্তী পথচলার একটা পরিষ্কার ধারণা দিতেই আমাদের আজকের এই বিশেষ আয়োজন। তোমার রেজাল্ট আশানুরূপ হোক বা না হোক, এই লেখাটা তোমার জন্যই। চলো, শুরু করা যাক।
আমার জীবনের সেরা একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা এক কাপ চা আর আকাশ (কাল্পনিক নাম) নামের এক যোদ্ধার গল্প
আমার খুব কাছের এক ছোট ভাইয়ের নাম আকাশ। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিল, কিন্তু ওর স্বপ্ন ছিল প্রোগ্রামার হওয়ার। কম্পিউটার আর কোডিংয়ের জগতে ডুবে থাকতেই ভালোবাসত। ওর পরিবার এবং শিক্ষকরা আশা করেছিল, ও গোল্ডেন GPA-5 পাবে। রেজাল্টের দিন দেখা গেল, ওর ফিন্যান্স পরীক্ষার রেজাল্ট সামান্য খারাপ হওয়ায় GPA-5 আসেনি, পেয়েছে ৪.৮৯।
দিনটা ছিল মেঘলা, আকাশের মনের মতোই। সবাই যখন ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, ও তখন নিজেকে এক ঘরের মধ্যে আটকে ফেলেছিল। ওর মনে হচ্ছিল, জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগটা ও হারিয়ে ফেলেছে। ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না, ওর প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্নটাও হয়তো শেষ।
কয়েকদিন পর আমি ওর সাথে দেখা করতে যাই। ওকে বলি, "শোন, তোর মার্কশিটের নাম্বারগুলো তোর মেধা বা স্বপ্নের চেয়ে বড় নয়। তুই যা হতে চাস, তার জন্য যে পথটা দরকার, সেটা খুঁজে বের করাই আসল চ্যালেঞ্জ।"
আমার কথাগুলো ওকে কতটা প্রভাবিত করেছিল জানি না, কিন্তু এরপর ও আর থেমে থাকেনি। ঢাকার একটি মোটামুটি মানের কলেজে ভর্তি হলেও নিজের স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানো থামায়নি। দিনের পর দিন ইউটিউব দেখে, অনলাইন কোর্স করে প্রোগ্রামিং শিখেছে। কলেজ পাশ করার পর ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় দেশের সেরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে সুযোগ পেয়ে যায়। আজ ও একটি আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করছে। ওর মাসিক আয় ওর অনেক GPA-5 পাওয়া বন্ধুদের থেকেও বেশি।
আকাশের গল্পটা বলার কারণ হলো, একটা পরীক্ষার রেজাল্ট কখনো তোমার ভেতরের সম্ভাবনাকে শেষ করে দিতে পারে না। আসল যুদ্ধটা শুরু হয় রেজাল্টের পর।
অনলাইনে SSC রেজাল্ট ২০২৫ চেক করার সবচেয়ে সহজ উপায় (স্ক্রিনশটসহ গাইড)
রেজাল্ট দেখার জন্য এখন আর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই তুমি তোমার ফলাফল জানতে পারবে। নিচে দুটি সহজ উপায় দেওয়া হলো:
১. ওয়েবসাইট থেকে রেজাল্ট দেখার নিয়ম:
সবার আগে শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সাধারণত দুটি ওয়েবসাইটে দ্রুত রেজাল্ট পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইট: eboardresults.com বা educationboardresults.gov.bd
ধাপগুলো অনুসরণ করো:
Examination: এখানে "SSC/Dakhil/Equivalent" সিলেক্ট করো।
Year: "2025" সিলেক্ট করো।
Board: তুমি যে বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিয়েছো (যেমন Dhaka, Cumilla, Rajshahi) সেটি সিলেক্ট করো।
Result Type: এখানে "Individual Result" সিলেক্ট করলে বিস্তারিত মার্কশিটসহ ফলাফল দেখতে পাবে।
Roll: তোমার অ্যাডমিট কার্ড দেখে সঠিকভাবে রোল নম্বরটি লেখো।
Registration (Optional): রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি লিখলে আরও নির্ভুলভাবে রেজাল্ট আসবে।
Security Key: স্ক্রিনে দেখানো বাঁকা লেখা বা সংখ্যাগুলো (Captcha) সঠিকভাবে পাশের বক্সে লেখো।
Get Result: সব তথ্য ঠিক থাকলে "Get Result" বাটনে ক্লিক করো। সাথে সাথেই তোমার ফলাফল স্ক্রিনে ভেসে উঠবে।
(এখানে প্রতিটি ধাপের স্ক্রিনশট দিয়ে একটি ইনফোগ্রাফিক যোগ করুন। ছবিটি সহজে শেয়ার করা যাবে এবং পাঠকদের জন্য সুবিধাজনক হবে।)
২. SMS এর মাধ্যমে রেজাল্ট দেখার নিয়ম:
যদি ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত চাপের কারণে ঢুকতে সমস্যা হয়, তাহলে মোবাইল থেকে SMS পাঠিয়েও সহজেই ফলাফল জানতে পারবে।
ধাপগুলো অনুসরণ করো:
প্রথমে তোমার মোবাইলের Message অপশনে যাও।
নতুন মেসেজ লেখার জায়গায় টাইপ করো: SSC
এরপর একটি স্পেস দিয়ে তোমার বোর্ডের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর লেখো (যেমন, Dhaka বোর্ডের জন্য DHA, Cumilla বোর্ডের জন্য CUM)।
আবার একটি স্পেস দিয়ে তোমার রোল নম্বরটি লেখো।
সবশেষে আরও একটি স্পেস দিয়ে পরীক্ষার সাল "2025" লেখো।
মেসেজটি পাঠিয়ে দাও 16222 নম্বরে।
উদাহরণ: SSC DHA 123456 2025 লিখে পাঠিয়ে দাও 16222 নম্বরে।
ফিরতি মেসেজেই তোমার ফলাফল চলে আসবে।
সেকশন ১: অভিনন্দন চ্যাম্পিয়ন! GPA-5 পাওয়ার পর তোমার করণীয়
যারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল, বিশেষ করে GPA-5 পেয়েছো, তাদের জন্য রইল আন্তরিক অভিনন্দন! তোমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। এই মুহূর্তটা উপভোগ করো, পরিবার-বন্ধুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নাও। তবে আনন্দের আতিশয্যে ভেসে গিয়ে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো ভুলে গেলে চলবে না।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: এখন কী করবে?
সঠিক কলেজ নির্বাচন: GPA-5 পাওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি ভালো কলেজ নির্বাচন করা। শুধু নামকরা কলেজ হলেই হবে না, কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখো:
পরিবেশ ও সংস্কৃতি: কলেজের পরিবেশ তোমার মানসিক বিকাশের জন্য কতটা সহায়ক? অতিরিক্ত রাজনৈতিক বা র্যাগিং সংস্কৃতি আছে কিনা, তা খোঁজ নাও।
শিক্ষকদের মান: অভিজ্ঞ এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আছেন কিনা, তা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে পারো।
যাতায়াত সুবিধা: বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব এবং যাতায়াত ব্যবস্থা কেমন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
সহ-শিক্ষা কার্যক্রম: পড়াশোনার পাশাপাশি বিতর্ক, খেলাধুলা, বিজ্ঞান ক্লাব ইত্যাদি চর্চার সুযোগ আছে কিনা, তা তোমার সৃজনশীলতা বিকাশে সাহায্য করবে।
সঠিক বিভাগ (Group) নির্বাচন: ভবিষ্যতে কী হতে চাও, তার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ পছন্দ করো। বাবা-মা বা বন্ধুদের চাপে পড়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগ নিও না। তোমার যে বিষয়ে আগ্রহ এবং ভালো করার সম্ভাবনা আছে, সেটিই বেছে নাও।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: অনেক নামকরা কলেজেই এখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। তাই রেজাল্ট পেয়েই বসে না থেকে দ্রুত ওই কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন ও বিগত বছরের প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা নাও এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করো।
ভবিষ্যতের ভিত গড়ে তোলো: এই অবসর সময়টাকে কাজে লাগাও। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়াতে স্পোকেন ইংলিশ কোর্স করতে পারো। কম্পিউটারের বেসিক স্কিল, যেমন মাইক্রোসফট অফিস, সম্পর্কে ধারণা নিতে পারো। যারা বিজ্ঞান বিভাগে পড়বে, তারা উচ্চ মাধ্যমিকের গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানের বেসিক বিষয়গুলোয় চোখ বুলিয়ে রাখতে পারো।
সেকশন ২: ফলাফল আশানুরূপ হয়নি? একদম চিন্তা নয়!
যাদের রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি বা যারা অকৃতকার্য হয়েছো, তাদের জন্যই এই অংশটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রেখো, একটা রেজাল্ট খারাপ হওয়া মানে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়, বরং এটা একটা নতুন শুরুর ইঙ্গিত।
রেজাল্ট খারাপ? এই ৫টি কথা তোমার জানা দরকার
তুমি একা নও: জেনে রাখো, পৃথিবীতে বহু সফল মানুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিল গেটস হার্ভার্ড থেকে ড্রপআউট হয়েছিলেন, স্টিভ জবসকে তার নিজের কোম্পানি থেকেই বের করে দেওয়া হয়েছিল। তারা যদি থেমে যেতেন, তাহলে পৃথিবী আজকের প্রযুক্তি পেত না। তোমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই।
ফলাফল তোমার পরিচয় নয়: তোমার মার্কশিটের নম্বরগুলো কেবল তোমার দুই বছরের একাডেমিক পারফরম্যান্সের একটি সংখ্যা মাত্র। এটা তোমার মেধা, সততা, সৃজনশীলতা বা মানবিক গুণাবলির পরিমাপক নয়। নিজেকে এই সংখ্যার বেড়াজালে আটকে ফেলো না।
"লোকে কী বলবে?" – এটা ভাবা বন্ধ করো: আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো "লোকে কী বলবে?" এই চিন্তা। মনে রেখো, যারা আজ তোমাকে নিয়ে সমালোচনা করছে, তোমার বিপদের দিনে তাদের কাউকেই পাশে পাবে না। তাই নিজের জীবন নিয়ে, নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকো।
বিকল্প পথ সবসময় খোলা থাকে: GPA-5 না পেলে ভালো কলেজে সুযোগ হবে না বা জীবন অন্ধকার—এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। সাধারণ কলেজ থেকে পড়েও বহু শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা বিষয়ে সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং, বিভিন্ন টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল কোর্স রয়েছে, যেগুলো চাকরির বাজারে অনেক বেশি কার্যকরী।
নিজেকে সময় দাও: রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর কষ্ট পাওয়া, কান্না করাটা স্বাভাবিক। নিজের আবেগগুলোকে দমিয়ে রেখো না। কয়েকদিন সময় নাও, মন খারাপ করো। তারপর আবার নতুন উদ্যমে উঠে দাঁড়াও। পরিবারের সাথে কথা বলো, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাও। দেখবে, মন অনেক হালকা হয়ে গেছে।
"GPA-5 পাইনি, এখন কী করব?" – তোমার কর্মপরিকল্পনা
বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা পুনঃনিরীক্ষণ: যদি তোমার মনে হয় কোনো বিষয়ে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম নম্বর পেয়েছো, তাহলে বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারো। অনেক সময় নম্বর গণনায় ভুল থাকে, যা পুনঃনিরীক্ষণে ঠিক হয়ে যায়।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং: যাদের কারিগরি দিকে আগ্রহ আছে, তাদের জন্য ডিপ্লোমা একটি অসাধারণ সুযোগ। ৪ বছর মেয়াদী এই কোর্স শেষে সরাসরি চাকরির সুযোগ রয়েছে এবং পরে B.Sc. ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ারও সুযোগ থাকে। সিভিল, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যালসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা করা যায়।
কারিগরি বা ভোকেশনাল ট্রেনিং: বিভিন্ন ট্রেড কোর্স, যেমন—গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ইলেকট্রিশিয়ান, মোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি শিখে তুমি দ্রুত স্বাবলম্বী হতে পারো। বর্তমানে চাকরির চেয়ে দক্ষ কর্মীর চাহিদা অনেক বেশি।
সাধারণ কলেজে ভর্তি: তোমার প্রাপ্ত জিপিএ অনুযায়ী একটি ভালো সাধারণ কলেজে ভর্তি হয়ে যাও। মনে রেখো, কলেজ নয়, তোমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা এবং এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টই তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। কলেজে ভালো করে পড়াশোনা করলে ভার্সিটি ভর্তির সময় তুমি অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।
অনুপ্রেরণা: GPA-5 না পেয়েও যারা সফল
আমাদের চারপাশে এমন অনেক সফল মানুষ আছেন, যাদের একাডেমিক রেজাল্ট খুব আহামরি ছিল না। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ভাই, কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, নটরডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার প্রতিভার জোরে আজ দেশের সেরা একজন কার্টুনিস্ট। এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে। এরা প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন পূরণের জন্য দরকার অদম্য ইচ্ছা এবং পরিশ্রম, শুধু GPA-5 নয়।
সেকশন ৩: মা-বাবার জন্য কিছু কথা: সন্তানের পাশে থাকুন, বিপক্ষে নয়
সন্তানের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অভিভাবকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আপনাদের কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।
করণীয়:
সন্তানকে মানসিক সাপোর্ট দিন: ফলাফল যাই হোক, সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরুন। তাকে বোঝান যে আপনারা তার পাশে আছেন। তার পরিশ্রমকে সম্মান জানান।
তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন: আপনার সন্তানের রেজাল্টকে অন্য কারো (আত্মীয়, প্রতিবেশী বা বন্ধুর সন্তান) সাথে তুলনা করবেন না। এই তুলনা সন্তানের আত্মবিশ্বাস চিরতরে নষ্ট করে দেয়।
তার কথা শুনুন: সে কী বলতে চায়, তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তা মন দিয়ে শুনুন। তার ওপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেবেন না।
বিকল্প পথগুলো নিয়ে আলোচনা করুন: যদি ফলাফল খারাপ হয়, তাহলে তাকে বকাঝকা না করে বিকল্প কী কী পথ খোলা আছে, তা নিয়ে একসাথে বসে আলোচনা করুন।
বর্জনীয়:
অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবেন না: "GPA-5 পেতেই হবে" বা "অমুক কলেজে চান্স পেতেই হবে"—এই ধরনের চাপ সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
নেতিবাচক কথা বলবেন না: "তোকে দিয়ে কিছু হবে না" বা "আমাদের মুখ ডোবালি"—এই কথাগুলো সন্তানের মনে 깊ко ক্ষত সৃষ্টি করে।
অন্যের সামনে সন্তানকে অপমান করবেন না: এটি সন্তানের আত্মসম্মানে আঘাত করে এবং সে হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করে।
সেকশন ৪: ২০২৫ SSC পরীক্ষার পর কলেজ ভর্তির পূর্ণাঙ্গ চেকলিস্ট
ভর্তির দৌড়ঝাঁপ শুরু করার আগে একটি চেকলিস্ট বানিয়ে নিলে কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যায়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
SSC পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (১০-১২ কপি করে রাখো)।
মার্কশিটের অনলাইন কপির প্রিন্টআউট।
পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (১০-১৫ কপি)।
জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি।
বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
ভর্তি প্রস্তুতির ধাপ:
কলেজ তালিকাভুক্ত করা: তোমার জিপিএ অনুযায়ী কোন কোন কলেজে আবেদন করতে পারবে, তার একটি তালিকা তৈরি করো।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তির খোঁজ রাখা: পছন্দের কলেজগুলোর ওয়েবসাইটে বা জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির জন্য চোখ রাখো। আবেদনের তারিখ ও শেষ সময় জেনে নাও।
অনলাইনে আবেদন: এখন বেশিরভাগ কলেজে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। নিজে না পারলে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নাও, কিন্তু আবেদনে ভুল করা যাবে না।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি (যদি থাকে): নির্দিষ্ট কলেজের জন্য প্রস্তুতি নাও।
বাজেট পরিকল্পনা: ভর্তি ফি, মাসিক বেতন, যাতায়াত এবং অন্যান্য খরচের জন্য একটি বাজেট তৈরি করে রাখো।
সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ (FAQ)
প্রশ্ন ১: এসএসসি রেজাল্ট ২০২৫ কবে দিবে?
উত্তর: সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হয়। (২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আগামী ১৩ থেকে ১৫ জুলাই এর মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে।) তবে নির্দিষ্ট তারিখের জন্য শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে চোখ রাখুন।
প্রশ্ন ২: মোবাইল দিয়ে কিভাবে রেজাল্ট চেক করব?
উত্তর: SSC <স্পেস> বোর্ডের প্রথম ৩ অক্ষর <স্পেস> রোল <স্পেস> 2025 লিখে 16222 নম্বরে পাঠিয়ে দিন।
প্রশ্ন ৩: মার্কশিটসহ রেজাল্ট কিভাবে দেখবো?
উত্তর: eboardresults.com ওয়েবসাইটে গিয়ে Result Type অপশনে "Individual Result" সিলেক্ট করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিলেই মার্কশিটসহ ফলাফল দেখা যাবে।
প্রশ্ন ৪: বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা পুনঃনিরীক্ষণের নিয়ম কী?
উত্তর: ফলাফল প্রকাশের পরদিন থেকেই সাধারণত টেলিটক সিমের মাধ্যমে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যায়। প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট ফি প্রযোজ্য। বিস্তারিত নিয়মাবলী বোর্ডের ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ৫: GPA কম এলে কি ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, সম্ভব। অনেক ভালো কলেজে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করানো হয়। এছাড়া, বিভাগীয় এবং জেলা শহরের অনেক মানসম্মত কলেজ রয়েছে যেখানে তুলনামূলক কম জিপিএ নিয়েও ভর্তি হওয়া যায়।
শেষ কথা: এটা শুধু শুরু
সবশেষে একটাই কথা বলার—এই SSC রেজাল্ট তোমার জীবনের গতিপথের একটি ছোট বাঁক মাত্র। এই বাঁকের পর তোমার সামনে এক বিশাল, সম্ভাবনাময় রাস্তা অপেক্ষা করছে। যারা ভালো করেছো, তারা এই সাফল্যকে ধরে রাখার জন্য পরিশ্রম করো। আর যাদের ফলাফল মনের মতো হয়নি, তারা হতাশ না হয়ে নতুন উদ্যমে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নাও।
মনে রেখো, জীবনের দৌড়ে তারাই জেতে, যারা একবার পড়ে যাওয়ার পর আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। তোমার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা।