স্বাস্থ্যহীন ব্যবস্থা: অন্তর্লীন বাংলাদেশের অজানা অধ্যায়

ঢাকার বাতাসে আজ এক অদ্ভুত ভার। সকাল থেকে হাসপাতালগুলোর সামনে লম্বা লাইন, ওষুধের দোকানে হাহাকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকলেই দেখা যায়, “সার্ভার ডাউন”। কেউ জানে না, কেন এই হঠাৎ স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যয়।

রাত ১০টা। সাংবাদিক আরিফা তার ল্যাপটপের সামনে বসে। গত কয়েকদিনের রিপোর্টগুলো একটার পর একটা পড়ছে। একটি তথ্য তার চোখে পড়ে: “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৩০% অজানা খাতে ব্যয় হয়েছে।” কিন্তু সেই খাতের নাম কোথাও নেই।

একজন অজ্ঞাতনামা সূত্র থেকে আরিফা একটি ফাইল পায়। ফাইলটির নাম: “Project Nirapod”। ফাইল খুলতেই দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহকৃত ওষুধের তালিকা, যার বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। আরও দেখা যায়, কিছু হাসপাতালের সরঞ্জাম কখনোই পৌঁছায়নি, অথচ বিল পরিশোধ হয়েছে।

আরিফা সিদ্ধান্ত নেয়, এই তথ্য প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু সে জানে, এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। তবুও, সে তার ব্লগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে: “স্বাস্থ্যহীন ব্যবস্থা: অন্তর্লীন বাংলাদেশের অজানা অধ্যায়”।

প্রতিবেদনটি রাতারাতি ভাইরাল হয়। মানুষ প্রশ্ন করতে শুরু করে, “আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কোথায়?” সরকার চাপের মুখে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু আরিফা জানে, এই কমিটি হয়তো সত্য আড়াল করতেই গঠিত হয়েছে।

আরিফার প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর, দেশের রাজনীতিতে এক নতুন ঢেউ উঠে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির খবর জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সরকারি কর্মকর্তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করে, এবং তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে গতি আসে।

এই সময়ে, আরিফা একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন পায়। ফোনের অপর প্রান্তে একজন রহস্যময় ব্যক্তি নিজেকে “ছায়া পরিষদ”-এর সদস্য বলে পরিচয় দেয়। তিনি আরিফাকে সতর্ক করেন, “আপনি যা করছেন, তা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। থেমে যান।”

আরিফা ভয় পায়, কিন্তু থেমে যায় না। সে আরও গভীরে অনুসন্ধান শুরু করে। একজন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র তাকে জানায়, “ছায়া পরিষদ” একটি গোপন সংগঠন, যারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রভাব বিস্তার করে। তাদের উদ্দেশ্য, দেশের নীতিনির্ধারণে নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করা।

আরিফা তার অনুসন্ধানে আরও জানতে পারে, “ছায়া পরিষদ” কেবল স্বাস্থ্য খাতেই নয়, শিক্ষা, অর্থনীতি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতেও তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের সদস্যরা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী।

এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে, আরিফা একটি নতুন প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। কিন্তু প্রকাশের আগেই, তার ল্যাপটপ হ্যাক হয় এবং সমস্ত তথ্য মুছে যায়। সে বুঝতে পারে, “ছায়া পরিষদ” তাকে থামাতে চায়।

দেশজুড়ে যখন রাজনৈতিক দুর্নীতি, অদৃশ্য শক্তি ও ছায়া পরিষদের প্রভাব নিয়ে ঝড় বইছে, তখন প্রকৃতি তার নিজস্ব ভাষায় প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। বর্ষা এসেছে অনিয়ন্ত্রিত রূপে—স্রোতস্বিনী নদীগুলো হঠাৎ করেই রূপ নেয় রাক্ষসীতে।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। বরগুনা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরায় এক রাতেই গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো পরিবার। রাজধানী ঢাকাতেও পানিতে ডুবে যায় একাধিক ওয়ার্ড, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল।

এই সময়েই আরিফা নতুন এক অনুসন্ধানে নামে। তার হাতে আসে এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট—দেশের একাধিক বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পরিবেশনীতি লঙ্ঘন করে নদী-নালায় বিষাক্ত বর্জ্য ফেলছে, যার ফলে স্থানীয় জলবায়ু দ্রুত বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। এই কোম্পানিগুলোর মালিকদের সঙ্গে আবারো জড়িয়ে পড়ে ছায়া পরিষদের একাধিক সদস্য।

আরিফা দেখে, শুধু দুর্নীতি নয়—পরিবেশ ধ্বংসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চক্রের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সে এবার তার কলমকে রূপ দেয় ‘প্রকৃতির কণ্ঠস্বর’-এ। সে লেখে:

“মানুষ ভুলে গেছে, প্রকৃতি নীরব হলেও ক্ষমাশীল নয়।”

কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং এক গভীর রাজনৈতিক খেলাও বটে।

রাত গভীর। খবরের কাগজে কাজ করা রিয়াদ তার ডেস্কে বসে শেষ রিপোর্টটি সম্পাদনা করছিল। হঠাৎ তার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে এক সতর্কবার্তা—"আপনার রিপোর্টটি অনুমোদিত নয়, অনুগ্রহ করে মুছে ফেলুন।"

রিয়াদ থমকে যায়। কারণ রিপোর্টটি ছিলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে, প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর অর্থ পাচারের প্রমাণ নিয়ে।

এটা নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে সত্য বলার চেষ্টা করা বহু সাংবাদিক হয় চাকরি হারিয়েছেন, নয়তো বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন নীরবতা। অনেকে গায়েব, কেউ কেউ দেশছাড়া। আর যারা থেকে গেছেন, তারা প্রতিনিয়ত বসে আছেন ‘রিমোট সেন্সরশিপ’-এর আতঙ্কে।

দেশজুড়ে মিডিয়াগুলো বিভক্ত—কিছু দলীয় প্রচারে ব্যস্ত, কিছু কর্পোরেট স্বার্থে মিথ্যা সাজাতে ওস্তাদ। সাধারণ মানুষ মিডিয়া দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না। সত্য যেন ‘সংবাদ’ হয়ে উঠার আগেই হারিয়ে যাচ্ছে অনুমতি, চাপ, বা বিজ্ঞাপনদাতার ইচ্ছার ভিড়ে।

আরিফা ও রিয়াদ একসাথে একটি বিকল্প প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়—যেখানে সাংবাদিকতা হবে নির্ভীক, সত্যভিত্তিক, এবং স্বাধীন। কিন্তু এ পথ সহজ নয়। তারা জানে, পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে হুমকি, মামলা, বা নিঃশব্দে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া।

আমাদের প্রশ্ন করে—যখন সংবাদপত্র ব্যর্থ হয়, তখন সত্য কার কণ্ঠে বাঁচে?

শহরের অলিগলি, ক্যাম্পাস, কাঠের বেঞ্চ, চায়ের দোকান – সবখানেই একটা গুঞ্জন। অনেকে বলে “এইবার কিছু একটা হবে।”

আসলে কিছু একটা হচ্ছেই।
Previous Post Next Post
Love Poems
Health Tips
Food & Recipes
Read Books
Job Circulars
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...