সমাবেশের নামে শ্বাসরুদ্ধ ঢাকা: নাগরিক ক্ষোভের নীরব চিৎকার

বাংলাদেশে কথায় কথায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে জনজীবন দুর্বিষহ। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বন্ধে করণীয় কী? জানুন সমালোচনামূলক বিশ্লেষণে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বারবার দেখা যায়—কথায় কথায় রাজপথে প্রতিবাদ, অবরোধ ও বিক্ষোভ। বিভিন্ন দল নিজেদের দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের জন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরুদ্ধ করে ফেলে, যার ফলে জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়ে। স্কুলগামী শিশু, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, অফিসগামী মানুষ—সকলেই হয়রানির শিকার হয়। প্রশ্ন ওঠে: এই ধারা কি গণতন্ত্রের অংশ, নাকি জনগণের প্রতি উদাসীনতা? এই ব্লগে আলোচনা করা হয়েছে এই রাজনৈতিক আচরণের পেছনের বাস্তবতা, এর প্রভাব এবং সম্ভাব্য প্রতিকার। সমাধান হিসেবে এসেছে—আন্দোলনের নতুন সংস্কৃতি গড়া, আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা এবং জনগণকে রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন করা।

🚧 রাজনীতি মানেই কি সড়ক অবরোধ?
বাংলাদেশে রাজনীতি যেন এক মহা ট্র্যাজেডির নাম—যার কেন্দ্রবিন্দুতে নেই জনগণ, বরং আছে ক্ষমতা।
বছরের পর বছর আমরা একই দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত:
একটি দল ক্ষমতায় এলে অন্য দল সড়কে নামে,
দাবি থাকে সরকার পতনের,
প্রতিক্রিয়া থাকে হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ—
আর যাঁরা মাঝখানে পিষ্ট হন, তাঁরা আমরা—সাধারণ মানুষ।

প্রশ্ন জাগে—
আমাদের অপরাধ কী?
কেন আমাদের জীবন বারবার "রাজনীতি"র নামে জিম্মি করা হবে?

🏥 একজন রোগীর আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছে না

একবার ভেবে দেখুন:
একজন বাবা তার অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে বেরিয়েছেন হাসপাতালে। পথে পড়ে যান সমাবেশের মুখে। রাস্তায় জ্যাম, চারদিকে স্লোগান—অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন গিলে ফেলে রাজনৈতিক উচ্চারণ।

সন্তান বাঁচে না।
কিন্তু কোন রাজনৈতিক নেতার বিবেক কাঁপে কি ? কার বিরুদ্ধে বিচার হয়?

"নির্বাচন নয়, এই মৃত্যু আমাদের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।"

🗓️ আর কতকাল চলবে এই অভিশপ্ত সংস্কৃতি?
১৯৯০ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত—
বিভিন্ন সরকার গেছে, এসেছে, সংবিধান পাল্টেছে, সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করেছে, নির্বাচন কমিশন বদলেছে—কিন্তু একটি জিনিস বদলায়নি:
জনগণের দুর্ভোগ রাজনীতির পা-দলিতে পদদলিত।

সড়ক অবরোধ, হরতাল, গাড়ি ভাঙচুর—এসব কি ২১শ শতকের গণতন্ত্রের নমুনা?

📣 জনগণের কণ্ঠ কখন উচ্চারিত হবে?

রাজনৈতিক দলগুলো বলে—তারা জনগণের জন্য আন্দোলন করছে।
তাহলে কেন সেই আন্দোলনে জনগণের হাঁটা বন্ধ হয়, স্কুল বন্ধ হয়, রোগী মারা যায়, কর্মী চাকরি হারায়?

এই কি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা?

“আমরা কি কেবল ভোটের সময়ই মানুষ? বাকি সময় পাটের বস্তার মতো রাস্তার পাশে ফেলে রাখা গণতন্ত্রের ছবি?”

🔍 সমাধান কি শুধুই আইন?

অনেকে বলে, কড়া আইন প্রণয়ন করলেই সমাধান।
কিন্তু সত্যি কি তাই?
যখন রাজনীতিবিদরাই আইনের ঊর্ধ্বে, তখন আইন কাকে থামাবে?

সমাধান আছে একটিই—সাংস্কৃতিক পরিবর্তন।
রাজনীতি মানে যদি সেবা হয়, তবে আন্দোলনের ভাষাও হোক মানুষের কষ্ট লাঘবের।

🧨 এবার থামো, আমরা আর পারছি না!

দয়া করে থামুন।
রাজপথে প্রতিবাদ করুন, কিন্তু হাসপাতালের পথ বন্ধ করবেন না।
চিৎকার করুন, কিন্তু শিশুদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করবেন না।
লড়ুন, তবে জনগণের বিরুদ্ধে নয়—জনগণের জন্য।

কারণ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি ‘ভোটার’—আর সেই ভোটারই যদি প্রতিদিন ঘরে ফেরার যুদ্ধ লড়েন, তবে এই দেশের রাজনীতি আসলে কাদের জন্য?

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলে দলে সড়ক অবরোধে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন আন্দোলনের বিকল্প সংস্কৃতি গড়ে তোলা, আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা এবং জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও সংগঠিত করা। রাজনীতি হতে হবে জনস্বার্থে, জনদুর্ভোগে নয়।

Previous Post Next Post
Love Poems
Health Tips
Food & Recipes
Read Books
Job Circulars
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...