বাংলাদেশের প্রাক-বর্ষা মৌসুমে অল্প কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—আমাদের নগরপরিকল্পনা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি কতটা দুর্বল ও দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত—প্রায় সবখানেই দেখা দিয়েছে চরম জনদুর্ভোগ।
🏙️ ঢাকা: এক আধুনিক নগরীর নাম, অথচ জলাবদ্ধতার অভিশাপে জর্জরিত
রাজধানী ঢাকায় যেন বৃষ্টির পরিণতি মানেই পানিতে ডুবে যাওয়া শহর। মিরপুর, ধানমন্ডি, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা ও রামপুরার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাস্তায় হাঁটু-থেকে-কমর সমান পানি জমে যায় মাত্র দুই-তিন ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতেই।
একজন ভুক্তভোগী চাকরিজীবী বলেন: “অফিসে যেতে ৩০ মিনিট লাগার কথা, কিন্তু আজ লেগেছে ৩ ঘণ্টা!”
নিচতলার বাসিন্দাদের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, আসবাবপত্র ভেসে গেছে। যানবাহন চলাচল প্রায় অচল, অধিকাংশ রাস্তায় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
তথ্য বলছে, রাস্তায় বাসগুলোর মালিকেরা দীর্ঘসময় রাস্তার পাশে যানবাহন পার্ক করে রাখেন, যা জটিলতা আরও বাড়ায়।
🏞️ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার: ভূমিধসে মৃত্যু, উপকূলে ভাঙন
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও লালখান বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৩ জন। কয়েকটি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের মহেশখালী, টেকনাফ, কুতুবদিয়ায় ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, জাল ও নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
🌾 কৃষক যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে একা
উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে ধান কাটার আগেই মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও নোয়াখালীর মতো অঞ্চলে বীজতলা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে আগাম রোপণের সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
স্থানীয় এক কৃষক বলেন:
“ধান আর ঘরে তুলতে পারিনি। এখন বৃষ্টির ভয়ে আবার মাঠে নামতে পারছি না। কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে?”
চাষাবাদে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কৃষকরা সরকারের সহায়তার দিকে চেয়ে আছেন। কিন্তু কোথাও এখনও তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
🏥 স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে: পানিবাহিত রোগ ও ডেঙ্গুর আশঙ্কা
বরিশালে পানিতে ডুবে মারা গেছে এক শিশু। ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় পানি জমে থাকায় মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
ডেঙ্গু, টাইফয়েড, পানিবাহিত রোগ ও চর্মরোগের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
বস্তি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট চরমে। কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি-নির্ভর খাবারের দাম বৃদ্ধি ও সংকট।
🚌 যানজট ও বাস পার্কিং: জনগণের অসহ্য অবস্থা
বিশেষ করে ঢাকায় দেখা গেছে—যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাসমালিকদের দখলদারি মানসিকতা।
প্রায় প্রতিটি মোড়ে ও ব্যস্ত রাস্তায় বাসগুলোকে দীর্ঘক্ষণ পার্ক করে রাখা হয়, যা বিপর্যয়কে আরও তীব্র করে তুলছে।
একজন যাত্রী বলেন:
“জলাবদ্ধতার জন্য যেমন আমরা কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়েও বেশি ভোগাচ্ছে যত্রতত্র পার্কিং করা বাসগুলো। রাস্তাই যেন পার্কিং গ্যারেজ!”
🗣️ জনগণের অভিব্যক্তি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা
নগরবাসীর অভিযোগ—প্রতি বছর এই দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি ঘটে, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্টের মতে:
“২০ হাজারের বেশি পরিবার বর্তমানে পানিবন্দী। ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।”
✅ সমাধান ও সুপারিশ
✅ জলাবদ্ধতা রোধে সিটি কর্পোরেশন ও এলজিইডি-র সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
✅ ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেম ডিজিটাল মানচিত্রে তুলে আধুনিকায়ন করতে হবে।
✅ চট্টগ্রাম ও উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমিধসপ্রবণ এলাকায় পুনর্বাসন প্রকল্প শুরু করা প্রয়োজন।
✅ কৃষকদের জন্য জরুরি ক্ষতিপূরণ ও বিনা সুদে কৃষিঋণ চালু করা উচিত।
✅ বাস স্টপেজে আইনগতভাবে বাস পার্কিং নিষিদ্ধ এবং কঠোর নজরদারি চালু করা উচিত।
🤲 শেষ কথা: সময় এখন সচেতন হওয়ার, নয়তো...
বাংলাদেশের মানুষ দুর্যোগের সঙ্গে লড়াকু হলেও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় তারা আজ অসহায়।
আসুন, আমরা সচেতন হই, কথা বলি, দাবি তুলি—যাতে এই দুর্ভোগকে আর যেন বার্ষিক নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে না হয়।
📌 লেখাটি ভালো লাগলে Kalpakatha360 ব্লগে শেয়ার করুন এবং মন্তব্যে জানান, আপনার এলাকা কেমন আছে?
🏙️ ঢাকা: এক আধুনিক নগরীর নাম, অথচ জলাবদ্ধতার অভিশাপে জর্জরিত
রাজধানী ঢাকায় যেন বৃষ্টির পরিণতি মানেই পানিতে ডুবে যাওয়া শহর। মিরপুর, ধানমন্ডি, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা ও রামপুরার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাস্তায় হাঁটু-থেকে-কমর সমান পানি জমে যায় মাত্র দুই-তিন ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতেই।
একজন ভুক্তভোগী চাকরিজীবী বলেন: “অফিসে যেতে ৩০ মিনিট লাগার কথা, কিন্তু আজ লেগেছে ৩ ঘণ্টা!”
নিচতলার বাসিন্দাদের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, আসবাবপত্র ভেসে গেছে। যানবাহন চলাচল প্রায় অচল, অধিকাংশ রাস্তায় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
তথ্য বলছে, রাস্তায় বাসগুলোর মালিকেরা দীর্ঘসময় রাস্তার পাশে যানবাহন পার্ক করে রাখেন, যা জটিলতা আরও বাড়ায়।
🏞️ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার: ভূমিধসে মৃত্যু, উপকূলে ভাঙন
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও লালখান বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৩ জন। কয়েকটি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের মহেশখালী, টেকনাফ, কুতুবদিয়ায় ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, জাল ও নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
🌾 কৃষক যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে একা
উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে ধান কাটার আগেই মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও নোয়াখালীর মতো অঞ্চলে বীজতলা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে আগাম রোপণের সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
স্থানীয় এক কৃষক বলেন:
“ধান আর ঘরে তুলতে পারিনি। এখন বৃষ্টির ভয়ে আবার মাঠে নামতে পারছি না। কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে?”
চাষাবাদে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কৃষকরা সরকারের সহায়তার দিকে চেয়ে আছেন। কিন্তু কোথাও এখনও তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
🏥 স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে: পানিবাহিত রোগ ও ডেঙ্গুর আশঙ্কা
বরিশালে পানিতে ডুবে মারা গেছে এক শিশু। ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় পানি জমে থাকায় মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
ডেঙ্গু, টাইফয়েড, পানিবাহিত রোগ ও চর্মরোগের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
বস্তি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট চরমে। কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি-নির্ভর খাবারের দাম বৃদ্ধি ও সংকট।
🚌 যানজট ও বাস পার্কিং: জনগণের অসহ্য অবস্থা
বিশেষ করে ঢাকায় দেখা গেছে—যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাসমালিকদের দখলদারি মানসিকতা।
প্রায় প্রতিটি মোড়ে ও ব্যস্ত রাস্তায় বাসগুলোকে দীর্ঘক্ষণ পার্ক করে রাখা হয়, যা বিপর্যয়কে আরও তীব্র করে তুলছে।
একজন যাত্রী বলেন:
“জলাবদ্ধতার জন্য যেমন আমরা কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়েও বেশি ভোগাচ্ছে যত্রতত্র পার্কিং করা বাসগুলো। রাস্তাই যেন পার্কিং গ্যারেজ!”
🗣️ জনগণের অভিব্যক্তি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা
নগরবাসীর অভিযোগ—প্রতি বছর এই দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি ঘটে, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্টের মতে:
“২০ হাজারের বেশি পরিবার বর্তমানে পানিবন্দী। ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।”
✅ সমাধান ও সুপারিশ
✅ জলাবদ্ধতা রোধে সিটি কর্পোরেশন ও এলজিইডি-র সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
✅ ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেম ডিজিটাল মানচিত্রে তুলে আধুনিকায়ন করতে হবে।
✅ চট্টগ্রাম ও উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমিধসপ্রবণ এলাকায় পুনর্বাসন প্রকল্প শুরু করা প্রয়োজন।
✅ কৃষকদের জন্য জরুরি ক্ষতিপূরণ ও বিনা সুদে কৃষিঋণ চালু করা উচিত।
✅ বাস স্টপেজে আইনগতভাবে বাস পার্কিং নিষিদ্ধ এবং কঠোর নজরদারি চালু করা উচিত।
🤲 শেষ কথা: সময় এখন সচেতন হওয়ার, নয়তো...
বাংলাদেশের মানুষ দুর্যোগের সঙ্গে লড়াকু হলেও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় তারা আজ অসহায়।
আসুন, আমরা সচেতন হই, কথা বলি, দাবি তুলি—যাতে এই দুর্ভোগকে আর যেন বার্ষিক নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে না হয়।
📌 লেখাটি ভালো লাগলে Kalpakatha360 ব্লগে শেয়ার করুন এবং মন্তব্যে জানান, আপনার এলাকা কেমন আছে?