১৪ বছর বয়সী হাফিজ বাবা-মাকে হারিয়ে জীবনের কঠিন বাস্তবতায় লড়ছে। শৈশবে মাদ্রাসায় পড়া এই শিশু আজ ঠান্ডা রাতে রাস্তার কোণে বসে সিজদায় আল্লাহকে ডাকে। ধৈর্য, ঈমান ও তাওয়াক্কুল তার সম্বল।
একদিন এক ভদ্রলোক তাকে গ্রহণ করেন নিজের ছেলের মতো। গল্পটি শেখায়—আল্লাহ কখনো ধৈর্যশীল বান্দাকে ফেলে দেন না।
🌃 রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা। শহরের কোণে ছোট্ট একটি ছাউনির নিচে কম্বল জড়িয়ে বসে আছে ছেলেটি—নাম তার হাফিজ। বয়স মাত্র ১৪। কিন্তু চোখে মুখে বড় মানুষের মতো চিন্তার ছাপ।
হাফিজ একসময় মাদ্রাসায় পড়ত। বাবা ছিলেন একজন ইমাম, মা ছিলেন গৃহিণী। অভাব ছিল, কিন্তু শান্তি ছিল ঘরে। বাবা মসজিদ থেকে এসে আদর করে বলতেন,
“বাবা হাফিজ, একদিন তুই হিফজ শেষ করবি, আর আমি তোর পিছনে দাঁড়িয়ে তারাবীহ পড়ব।”
কিন্তু সেই দিন আর আসেনি...
করোনার বছরেই বাবা প্রথমে চলে গেলেন আল্লাহর ডাকে, তারপর মা-ও অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলেন। হাসপাতালের বিছানায় একদিন বললেন,
“হাফিজ, আল্লাহর উপর ভরসা রাখিস। মানুষ নয়, আল্লাহ কখনো কাউকে ফেলে দেয় না।”
এরপর সবকিছু একে একে হারিয়ে গেল হাফিজের জীবন থেকে।
আজ যখন মাদ্রাসার বন্ধুরা ফোন দেয়, কেউ বলে, “ভাই, আমরা কাবা শরীফে আছি, দোয়া করব”—হাফিজ চুপ থাকে।
কেউ বলে, “আমার আব্বা আমায় নতুন জামা কিনে দিয়েছে”—হাফিজ শুধু হাসে। কারণ তার নতুন জামা নেই, ঈদ নেই, খুশিও নেই।
আর কেউ জিজ্ঞেসও করে না, “হাফিজ, তুই কেমন আছিস?”
তখন হাফিজ কাঁদে না, বরং রাতের আঁধারে সিজদায় পড়ে যায়।
সে বলে,
“হে আল্লাহ! দুনিয়া সবাই ভুলে যাক, তবুও তুমি যেন আমায় না ভুলো। আমার বাবা-মা নেই, কিন্তু তুমি তো আছো। তুমি তো বলেছো – আমি তোমার ৭০ জন মায়ের থেকেও বেশি মেহেরবান।”
রাত কাটে, সকাল আসে। মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের কাজে। হাফিজ আবার কিছু বই হাতে রাস্তার পাশে বসে, “আরবি শেখার প্রাইভেট টিউশন” এর বিজ্ঞাপন টানিয়ে দেয়।
এক ভদ্রলোক এসে বলে,
— “তুমি পড়াতে পারো?”
হাফিজ বলে,
— “আমি হাফিজুল কুরআন। শুধু আরবি না, আল্লাহর কথা শেখাতে পারি, যদি কেউ শিখতে চায়।”
ভদ্রলোক তাকিয়ে থাকে ছেলেটার মুখের দিকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
— “চলো, তুমি আমার ছেলেকে শেখাও। আর আমি তোমাকে নিজের ছেলের মতো দেখে রাখব।”
সেদিন রাতে হাফিজ আবার সিজদায় পড়ে।
এইবার তার চোখে জল, কিন্তু মুখে একটিই কথা:
“আল্লাহ তুমি কেবল ধৈর্য চেয়েছিলে, তুমি কখনো ফেলে দাওনি।”
💔 এই গল্প আমাদের শেখায়:
বাবা-মা না থাকলেও, আল্লাহ আছেন।
যারা নিঃস্ব, তাদের দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়।
দুনিয়া যদি অবহেলা করে, আল্লাহ করেন না।
ধৈর্য ও তাকওয়া—এই দুই-ই একজন হাফিজের সবচেয়ে বড় সম্বল।
ভাই ও বোনেরা, এই গল্প যদি আপনার হৃদয়ে একটু কষ্ট লাগায়, একটু চোখে জল আনে—তাহলে দয়া করে শেয়ার করুন।
হয়তো আপনার শেয়ারে কেউ জানবে, ‘সে একা নয়’। আল্লাহ তার সঙ্গে আছেন। 🤲