স্বপ্ন ভাঙার বেদনা – এইচএসসি ২০২৫ এর প্রশ্ন ফাঁস
একজন শিক্ষার্থী যখন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে, তখন তার স্বপ্ন থাকে ভালো ফল করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার। এইচএসসি পরীক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যা উচ্চশিক্ষা এবং ক্যারিয়ারের পথ খুলে দেয়। কিন্তু যখন এই স্বপ্নের পথে প্রশ্ন ফাঁসের মতো এক ভয়ংকর কালো ছায়া নেমে আসে, তখন সেই স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়, তাদের পরিবার, শিক্ষক এবং গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই গভীর উদ্বেগ ও হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে। এই ঘটনা শুধু একটি পরীক্ষার অনিয়ম নয়, এটি আমাদের জাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে এক চরম বিশ্বাসঘাতকতা। একজন শিক্ষার্থীর সারাবছরের পরিশ্রম আর স্বপ্নকে এভাবে পদদলিত হতে দেখলে সত্যিই হৃদয় কেঁদে ওঠে। আমরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এই প্রশ্ন ফাঁসের কারণে? এর প্রভাব শুধু এই বছরের পরীক্ষার্থীদের উপরই পড়ছে না, বরং এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিকেই নড়বড়ে করে দিচ্ছে।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সম্প্রতি বেশ জোরালোভাবে উঠেছে। যদিও নির্দিষ্ট কোনো বোর্ড বা বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুনির্দিষ্ট, অফিসিয়াল তথ্য এখনও সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়নি, তবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু অনলাইন প্লাটফর্মে এমন অভিযোগ ও কথিত প্রশ্নপত্রের স্ক্রিনশট দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা বা এমনকি আগের রাত থেকেই ফেসবুক, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে কিছু চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে, যারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে "নিশ্চিত কমন" বা "আসল প্রশ্নপত্র" বলে দাবি করে বিভিন্ন পিডিএফ ফাইল বা ছবি শেয়ার করছে।
প্রথম দিকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে, পরে ধীরে ধীরে আরও কিছু বিষয়ের কথিত প্রশ্নপত্রও একই উপায়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকরা যারা এসব গ্রুপের সদস্য ছিলেন, তারা হতবাক হয়ে এই অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেন। অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন – কথিত প্রশ্নপত্রটি কি আসল নাকি প্রতারণার ফাঁদ? এই অনিশ্চয়তা তাদের মানসিক চাপ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা তাদের হতাশা, রাগ এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। অনেকেই আশঙ্কা করছে, যদি এই কথিত প্রশ্নপত্রগুলো আসল হয়, তাহলে যারা রাত জেগে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের পরিশ্রম বৃথা যাবে। অন্যদিকে, যারা এই অনৈতিক পথ অবলম্বন করেছে, তারা হয়তো অন্যায়ভাবে ভালো ফল করবে। এটি একটি চরম অন্যায়ের ইঙ্গিত দেয় এবং পুরো পরীক্ষাব্যবস্থার প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা কমিয়ে দেয়।
বিশ্লেষণ: প্রশ্ন ফাঁসের কারণ ও কৌশল – নেপথ্যের কুশীলবরা কারা?
প্রশ্নপত্র ফাঁস কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি সুসংগঠিত চক্রের কাজ, যা শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে। এর পেছনে বহুবিধ কারণ এবং সুদূরপ্রসারী কৌশল কাজ করে:
প্রশ্ন প্রিন্টিং সেন্টার/পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দুর্বলতা:
প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে প্রিন্টিং এবং বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। কিন্তু অনেক সময় এই প্রক্রিয়াগুলোর কোনো একটি ধাপে দুর্বলতা থেকে যায়। প্রিন্টিং সেন্টারের অসাধু কর্মচারী, অথবা প্রশ্নপত্র পরিবহনের সময় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এই ফাঁসের মূল হোতা হতে পারে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অভ্যন্তরীণ দুর্বল ব্যবস্থাপনা বা কিছু অসাধু কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগও প্রায়শই শোনা যায়। সামান্য লোভের বশবর্তী হয়ে এরা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনিয়ন্ত্রিত শেয়ারিং:
একবার প্রশ্নপত্র বা তার কথিত অংশ ফাঁস হলে, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, টেলিগ্রাম চ্যানেল এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলো এই অবৈধ লেনদেনের প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব গ্রুপে তথাকথিত 'প্রশ্ন ফাঁসকারী' চক্র অত্যন্ত কৌশলে তাদের কার্যক্রম চালায়। তারা পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে অথবা পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নের ছবি বা পিডিএফ ফাইল আপলোড করে এবং দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। এই অনিয়ন্ত্রিত শেয়ারিং ঠেকানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ একটি পোস্ট ডিলিট করলেও তা ততক্ষণে শত শত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
টাকা-পয়সার লেনদেন ও চক্রের ভূমিকা:
প্রশ্ন ফাঁস একটি লাভজনক অবৈধ ব্যবসা। এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য থাকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া। তারা শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় এবং তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা দাবি করে। এই চক্রে সাধারণত বিভিন্ন স্তরের মানুষ জড়িত থাকে – প্রশ্ন সংগ্রহকারী, ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তি, এবং মধ্যস্বত্বভোগী যারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এদের মধ্যে অনেকেই থাকে প্রাক্তন শিক্ষার্থী অথবা এমন ব্যক্তিরা যারা এই শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত। তারা এমনভাবে কাজ করে যেন ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং সহজে আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়।
আইন ও শাস্তি: কঠোর আইন আছে, প্রয়োগ হচ্ছে কি?
প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ, যার জন্য বাংলাদেশে কঠোর আইন প্রয়োগের বিধান রয়েছে।
তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ অনুযায়ী শাস্তির ধারা:
বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এর প্রচারণার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এর অধীনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস বা তার প্রচার করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া, পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বা এর সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের জন্য সর্বনিম্ন ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রশ্নপত্র সংগ্রহ, বিতরণ বা পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তাকারীও এই আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধী।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিবৃতি বা ব্যবস্থা:
প্রতিটি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলে শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলো তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। অনেক সময় পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন বা বাতিল করার মতো সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তবে, এই ব্যবস্থাগুলো কি সত্যিই যথেষ্ট? বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রমাণ করে যে, এই চক্রকে সমূলে উৎপাটন করতে আরও কঠোর ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপের প্রয়োজন।
অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের করণীয়:
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া এবং অনৈতিক পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত রাখা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব বা অফার এলে সে বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো তাদের দায়িত্ব। শিক্ষার্থীদের উচিত কোনো ধরনের প্রলোভনে না পড়ে নিজের পরিশ্রমের ওপর আস্থা রাখা। যদি কোনো শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পায়, তবে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো তার নৈতিক দায়িত্ব। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়ানো বা শেয়ার করা থেকেও বিরত থাকা উচিত, কারণ এটিও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। মনে রাখতে হবে, শর্টকাট পথে সাফল্য আসে না, আসে কেবল অনুশোচনা।
ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ: একটি জাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা
প্রশ্নপত্র ফাঁস শুধু আইনত দণ্ডনীয় অপরাধই নয়, এটি ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও চরম নিন্দনীয়। প্রায় প্রতিটি ধর্মেই অসদুপায় অবলম্বন, মিথ্যাচার এবং অন্যের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
ইসলামে অসদুপায় অবলম্বন স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "যে প্রতারণা করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।" প্রশ্নপত্র ফাঁস করে পরীক্ষা দেওয়া বা করানো এক ধরনের প্রতারণা। এর মাধ্যমে একজন অযোগ্য ব্যক্তি যোগ্যদের অধিকার হরণ করে। এটি শুধু ব্যক্তির নিজের জন্য পাপ নয়, বরং এর কারণে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার মান নিচে নেমে আসে এবং একটি জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু, কারণ তারা জ্ঞানার্জনের পবিত্র প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে। এর ফলে সমাজে নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটে এবং মেধা ও যোগ্যতার পরিবর্তে প্রতারণা ও অন্যায় প্রাধান্য পায়। এটি কেবল একটি অন্যায় নয়, এটি গোটা জাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এটি শিক্ষার্থীদের মনে হতাশা সৃষ্টি করে এবং তাদের নৈতিক মূল্যবোধকে নষ্ট করে দেয়।
অন্যান্য ধর্মেও অসদুপায় এবং প্রতারণা নিষিদ্ধ। হিন্দুধর্মের নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী, সত্য ও ন্যায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অসদুপায় অবলম্বন অধর্মের শামিল। খ্রিস্টান ধর্মেও সততা ও নৈতিকতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং মিথ্যাচার ও প্রতারণা পাপ হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি ধর্মীয় মূল্যবোধই প্রশ্ন ফাঁসের মতো অনৈতিক কাজকে প্রত্যাখ্যান করে।
ভবিষ্যৎ পরামর্শ ও আহ্বান: আশার আলো জ্বালাতে হবে
প্রশ্ন ফাঁসের এই কালো মেঘের মধ্যেও আমাদের আশার আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের মনোবল ভাঙলে চলবে না।
ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস না হারানোর বার্তা: প্রিয় শিক্ষার্থীরা, মনে রাখবে, তোমাদের পরিশ্রম কোনোদিন বৃথা যায় না। এক-দুটি অনিয়ম হয়তো তোমাদের সাময়িকভাবে হতাশ করতে পারে, কিন্তু জ্ঞানার্জন একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। যারা পরিশ্রম করে শেখে, তারাই জীবনে সত্যিকার অর্থে সফল হয়। প্রশ্ন ফাঁসকারী বা সেই পথে হাঁটা মানুষরা হয়তো সাময়িক লাভবান হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তোমাদের মেধা ও যোগ্যতাই তোমাদের প্রকৃত সম্পদ। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হও, কিন্তু নিজের পড়াশোনায় কোনোভাবেই ছেদ ফেলো না। নিজের প্রতি আস্থা রাখো এবং সততার সঙ্গে এগিয়ে যাও।
সরকারের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান: শিক্ষাব্যবস্থা বাঁচাতে হলে সরকারকে আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশ্ন ফাঁস চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের মূলোৎপাটন করতে হবে। কেবলমাত্র কিছু গ্রেফতার বা বিবৃতি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রয়োজন একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, যেখানে প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে পরীক্ষা গ্রহণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রযুক্তিগত নজরদারি বাড়াতে হবে এবং জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন সাহস না পায়।
সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর গুরুত্ব: শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ – সবারই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যারা প্রশ্নপত্র কেনে বা বিক্রি করে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। গণমাধ্যমকেও এই বিষয়ে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে এই অন্ধকার চক্রের মুখোশ উন্মোচন হয় এবং মানুষ সচেতন হয়।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, ভেঙে পড়ো না, লড়ে যাও!
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তোমাদের মনে যে হতাশা আর ক্ষোভ তৈরি করেছে, তা আমরা বুঝতে পারছি। সারাবছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর যখন এমন অন্যায় চোখে পড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্ন ভাঙার মতো অনুভূতি হয়। তোমাদের মনে হতে পারে, এত কষ্ট করে পড়ে লাভ কী, যদি অসৎ উপায়ে ভালো ফল করা যায়? কিন্তু বিশ্বাস করো, এই হতাশাকে তোমাদের উপর চেপে বসতে দিলে চলবে না।
মনে রাখবে, সত্যিকারের জ্ঞান আর মেধা কোনোদিন চুরি করা যায় না। প্রশ্ন ফাঁস করে যারা সাময়িক সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছে, তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে। এই শর্টকাট পথ তাদের হয়তো সাময়িক সাফল্য এনে দেবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জীবনে সফল হওয়ার জন্য শুধু ভালো নম্বর যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন গভীর জ্ঞান, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং নৈতিকতা। এই গুণগুলো পরিশ্রম করেই অর্জন করতে হয়, কোনো ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে নয়।
তোমাদের পরিশ্রমই তোমাদের প্রকৃত শক্তি। এই ঘটনা তোমাদের মনোবল ভেঙে দিলেও, তোমাদের মেধা বা যোগ্যতাকে তা কেড়ে নিতে পারবে না। বরং, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তোমাদের আরও সোচ্চার হতে হবে। নিজেদের পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখো, কারণ জ্ঞানই তোমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
কী করবে তোমরা এখন?
পড়াশোনায় মনোযোগ দাও: গুজবে কান না দিয়ে নিজের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করো। তোমার প্রস্তুতিই তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
সচেতন থাকো: প্রশ্ন ফাঁসের গুজব বা অফার এলে তাতে প্রলুব্ধ হয়ো না। বরং, কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জানাও।
ইতিবাচক থাকো: মনে রাখবে, একটি অন্যায় ঘটনা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র নয়। তোমাদের মতো অসংখ্য শিক্ষার্থী সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পড়াশোনা করছে।
সাহসী হও: যদি তোমার আশপাশে এমন কোনো অনৈতিক কাজ হতে দেখো, তবে তার প্রতিবাদ করো।
তোমরা দেশের ভবিষ্যৎ। তোমাদের সততা, মেধা আর নৈতিকতার উপরই আমাদের জাতি নির্ভর করছে। প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা হয়তো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, কিন্তু তোমাদের দৃঢ়তা আর সঠিক পদক্ষেপই এই অন্ধকার দূর করতে পারে। ভেঙে পড়ো না, লড়ে যাও। তোমাদের পরিশ্রমের ফল একদিন না একদিন অবশ্যই পাবে। তোমাদের পাশে আমরা সবাই আছি।
কল-টু-অ্যাকশন: আপনার কণ্ঠস্বরই পরিবর্তন আনবে!
এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার কী বলবেন? আপনি কি মনে করেন প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব? নাকি এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এক অভিশাপ হিসেবেই থেকে যাবে? নিচে কমেন্ট করুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত জানান।
আপনার একটি শেয়ার এই বার্তাটি হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। পোস্টটি শেয়ার করুন যেন সবাই সচেতন হয় এবং এই ঘৃণ্য চক্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়!