স্মৃতির কারিগর (দ্বিতীয় অধ্যায়)

গল্পের নাম: স্মৃতির কারিগর (দ্বিতীয় অধ্যায়)

আহনাফের ক্লিনিকের নিস্তব্ধতা ভারী পাথরের মতো চেপে বসেছে। বাইরে ঝলমলে ঢাকার রাত, আকাশগঙ্গার মতো ছড়িয়ে থাকা এয়ার-ট্যাক্সির আলো, হলোগ্রাফিক বিজ্ঞাপনের রঙিন বিভ্রম—সবকিছুই অর্থহীন, দূরের কোনো জগতের দৃশ্য বলে মনে হচ্ছে। তার সমস্ত মনোযোগ, সমস্ত অস্তিত্ব যেন কেন্দ্রীভূত হয়েছে হাতের তালুতে রাখা ছোট্ট কালো ডিভাইসটির ওপর। ব্যক্তিগত ডেটা-কোর। যার ভেতরে বন্দি আছে এক বিপজ্জনক সত্য।

তার বুকের ভেতরটা এখনো ধুকপুক করছে। পেশাদারিত্বের ঠাণ্ডা বর্ম ভেদ করে ভয় আর উত্তেজনার এক অদ্ভুত স্রোত বয়ে যাচ্ছে শিরা-উপশিরায়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সে এই কাজ করছে। মানুষের মনের সবচেয়ে অন্ধকার, গোপন কুঠুরিতে তার অবাধ বিচরণ। কিন্তু সে সবসময় নিজেকে একজন নির্লিপ্ত কারিগর ভেবে এসেছে। যে কেবল ভাঙা অংশটুকু মেরামত করে, কিন্তু সেই ভাঙনের পেছনের গল্প নিয়ে মাথা ঘামায় না। আজ প্রথমবারের মতো সে দেয়ালের ওপারে উঁকি দিয়েছে। আর এই এক উঁকিতেই তার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।

সে জানে, এই ক্লিনিকে বসে ডেটা-কোরটি পরীক্ষা করা আর বাঘের খাঁচায় ঢুকে মাংস রান্না করা একই কথা। 'স্মৃতি-টেক-লিমিটেড' তাদের কর্মীদের ওপর কড়া নজর রাখে। প্রতিটি সেশন, প্রতিটি ডেটা ট্রান্সফার তাদের সেন্ট্রাল সার্ভারে লগ করা হয়। যদিও সে আগন্তুকের সেশনটি লোকাল মোডে করেছিল, কোনো ব্যাকআপ রাখেনি, তবুও ক্লিনিকের সিস্টেমের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কোনো নজরদারি সফটওয়্যার তার এই অস্বাভাবিক কার্যকলাপ ধরে ফেলেনি, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো আহনাফ। সে ডেটা-কোরটি নিজের কোটের ভেতরের গোপন পকেটে চালান করে দিলো। তারপর তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো। এআই সহকারী 'নূরী'-কে আগামীকালের সমস্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করার নির্দেশ দিয়ে সে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে পড়লো।

করিডোরে পা রাখতেই তার মনে হলো, চারপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো যেন তার দিকেই বিশেষভাবে তাকিয়ে আছে। লিফটের মসৃণ ধাতব দেয়ালে নিজের প্রতিবিম্ব দেখেও চমকে উঠলো সে। অচেনা, উদ্বিগ্ন এক চেহারা। এই কি সেই আহনাফ, যে কিনা নিজের আবেগকে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো?

ভবনের নিচ থেকে নিজের ব্যক্তিগত, স্বয়ংক্রিয় গাড়িটা নিলো না সে। ওটা 'স্মৃতি-টেক-লিমিটেড'-এর নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত। তার প্রতিটি গতিবিধি ট্র্যাক করা সম্ভব। পরিবর্তে, সে হেঁটে কিছুটা দূরে গিয়ে একটি পাবলিক এয়ার-ট্যাক্সি স্টেশনের দিকে পা বাড়ালো। রাতের বাতাসে একটা শীতল পরশ, কিন্তু আহনাফের কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।

একটি চালকবিহীন এয়ার-ট্যাক্সিতে উঠে সে তার বাসার ঠিকানা দিলো না। কমান্ড দিলো শহরের অন্য প্রান্তে, পুরান ঢাকার দিকে যাওয়ার জন্য। যদি কেউ তাকে অনুসরণ করেও থাকে, তাহলে এই আকস্মিক রুট পরিবর্তন তাদের বিভ্রান্ত করবে। ট্যাক্সিটা নিঃশব্দে মাটি ছেড়ে উপরে উঠে গেলো, নিচু মেঘের স্তর ভেদ করে এগিয়ে চললো তার গন্তব্যে। কাঁচের জানালা দিয়ে সে নিচের শহরের দিকে তাকালো। আলোর মালায় সাজানো ঢাকা, যেন এক ডিজিটাল স্বপ্ন। এই স্বপ্নের কারিগর সে নিজেও। কত মানুষের কষ্টদায়ক সত্য সে মুছে দিয়েছে এই শহরকে সুন্দর রাখার জন্য! আজ তার নিজের হাতেই এমন এক সত্য, যা হয়তো এই গোটা শহরের ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে পারে।

পুরান ঢাকার একটি জনবহুল এলাকায় নেমে সে প্রায় আধঘণ্টা উদ্দেশ্যহীনভাবে বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরলো। আধুনিক ঢাকার চাকচিক্যের ছিটেফোঁটাও এখানে নেই। সরু গলি, পুরনো বাড়ি, মানুষের কোলাহল—সব মিলিয়ে এক ভিন্ন জগৎ। এখানে সে বেনামী, ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এক সাধারণ মানুষ। নিজেকে যথেষ্ট নিরাপদ মনে হওয়ার পর সে আরেকটি এয়ার-ট্যাক্সি নিলো, এবার নিজের বাসার রুটে।

বনানীর একটি অত্যাধুনিক, আকাশচুম্বী ভবনের সাতাশ তলায় তার অ্যাপার্টমেন্ট। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মোড়া এক দুর্গ। তার ব্যক্তিগত জগৎ। কিন্তু আজ সেই দুর্গকেও নিরাপদ মনে হচ্ছে না। দরজার সামনে দাঁড়াতেই বায়োমেট্রিক স্ক্যানার তার রেটিনা আর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে নিলো। ভারী দরজাটা নিঃশব্দে খুলে গেলো।

ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই নরম আলো জ্বলে উঠলো। ঘরের তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা তার পছন্দ অনুযায়ী সেট করা। তার ব্যক্তিগত হোম-এআই 'সাথী'র শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, "ঘরে স্বাগতম, আহনাফ সাহেব। আপনার দিনটি কেমন কাটলো?"

"ক্লান্তিকর," আহনাফ সংক্ষেপে উত্তর দিলো।

"আপনার জন্য ডিনার প্রস্তুত করতে বলবো? নাকি রিলাক্সেশন চেম্বারে কিছুক্ষণ সময় কাটাবেন?"

"কিছু লাগবে না, সাথী। আমাকে বিরক্ত করবে না। সমস্ত ইনকামিং কল আর মেসেজ ব্লক করে দাও, যতক্ষণ না আমি নির্দেশ দিচ্ছি।"

"আপনার নির্দেশ পালন করা হবে।"

আহনাফ সোজা তার স্টাডি রুমে চলে গেলো। এই ঘরটাই তার সবচেয়ে ব্যক্তিগত জায়গা। এখানকার কম্পিউটার সিস্টেম সম্পূর্ণ অফলাইন। কোনো নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত নয়। এখানেই সে তার সবচেয়ে গোপনীয় গবেষণাগুলো করে। ঘরের মাঝখানে রাখা ডেস্কে সে কাঁপা কাঁপা হাতে ডেটা-কোরটি রাখলো।

এখনই শেষ সুযোগ। সে চাইলে এই ডিভাইসটিকে একটি ম্যাগনেটিক পালস দিয়ে চিরতরে নষ্ট করে দিতে পারে। তাহলে সব রহস্য এখানেই শেষ। সে আবার তার নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট জীবনে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু পারবে কি? যে কৌতূহলের আগুন একবার জ্বলে উঠেছে, তা কি এত সহজে নিভবে? আগন্তুকের সেই মরিয়া কণ্ঠস্বর, সেই ভয়—তার কারণ না জানা পর্যন্ত সে কি আর কখনো শান্তিতে ঘুমাতে পারবে?

না, পারবে না। সে জানে, সে অনেক গভীরে চলে এসেছে। এখন ফেরার কোনো পথ নেই।

আহনাফ তার ব্যক্তিগত নিউরাল ইন্টারফেস হেডসেটটি মাথায় পরলো। ডেটা-কোরটি এয়ার-গ্যাপড টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত করলো। তার সামনে দুটি অপশন—স্মৃতিটিকে একটি হলোগ্রাফিক পর্দায় সিনেমার মতো দেখা, অথবা সেটিকে নিজের মস্তিষ্কের অস্থায়ী মেমোরি বাফারে লোড করে সরাসরি অনুভব করা। প্রথমটি নিরাপদ। দ্বিতীয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যের স্মৃতি, বিশেষ করে এমন তীব্র আবেগজড়িত স্মৃতি নিজের মস্তিষ্কে চালানো হলে মানসিক ভারসাম্যে তারতম্য ঘটতে পারে। স্মৃতি দুটি মিশে গিয়ে বাস্তব আর বিভ্রমের সীমারেখা মুছে যেতে পারে।

কিন্তু আহনাফ জানতো, শুধু দূর থেকে দেখে এই রহস্যের গভীরতা মাপা যাবে না। তাকে ওই মানুষটার চোখ দিয়ে দেখতে হবে, তার মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবতে হবে। তাকে ওই আট ঘণ্টা বাঁচতে হবে।

সে দ্বিতীয় অপশনটিই বেছে নিলো।

কমান্ড দেওয়ার সাথে সাথে তার চারপাশের জগৎ মিলিয়ে গেলো। স্টাডি রুম, ডেস্ক, কম্পিউটার—সব উধাও। এক মুহূর্তের জন্য completa অন্ধকার। তারপর, ধীরে ধীরে একটি নতুন জগৎ তার চেতনাকে গ্রাস করলো।

সে এখন আর আহনাফ নয়।

তার শরীরটা অন্যরকম লাগছে। পোশাকটাও ভিন্ন। সে একটি ধবধবে সাদা ল্যাবের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে কাঁচের দেয়াল, জটিল সব যন্ত্রপাতি আর হলোগ্রাফিক মনিটর। বাতাসের গন্ধটাও অন্যরকম—ওজোন আর জীবাণুনাশকের এক তীব্র মিশ্রণ। সে তার হাত দুটি চোখের সামনে তুলে ধরলো। এগুলো আহনাফের হাত নয়। কিছুটা বয়স্ক, আঙ্গুলে গবেষণার কারণে লেগে থাকা হালকা দাগ। একটি মনিটরের প্রতিফলনে সে তার চেহারা দেখলো। চল্লিশের কোঠায় বয়স, চোখে চশমা, চেহারায় বুদ্ধিমত্তা আর উদ্বেগের ছাপ। স্মৃতির ভেতর থেকে একটি নাম তার নিজের নাম হিসেবে মনে হলো—ডক্টর আদনান রশিদ।

সে 'স্মৃতি-টেক-লিমিটেড'-এর প্রধান গবেষক। তার কাজ ছিলো আলঝেইমার্স রোগীদের স্মৃতি পুনর্গঠনে সাহায্য করার প্রযুক্তি তৈরি করা। কিন্তু আজ সকালে সে যা আবিষ্কার করেছে, তা তার মহৎ উদ্দেশ্যকে এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।

তার চেতনা জুড়ে এখন ডক্টর আদনানের আবেগ আর চিন্তা। সে দ্রুত হাতে একটি এনক্রিপ্টেড ফাইল খুললো। প্রজেক্টের নাম: 'প্রোজেক্ট ফিনিক্স'। ফাইলের ভেতরে যা আছে, তা দেখে তার হৃৎপিণ্ড থেমে যাওয়ার উপক্রম হলো। 'স্মৃতি-টেক' তার গবেষণাকে ব্যবহার করে 'স্মৃতি প্রতিস্থাপন' এবং 'ব্যক্তিত্ব নির্মাণ'-এর এক অশুভ প্রযুক্তি তৈরি করেছে। তারা কেবল স্মৃতি মুছেই ফেলছে না, তারা মানুষের আস্ত পরিচয়কেই মুছে দিচ্ছে।

সে দেখলো একের পর এক ভিডিও লগ। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ—সরকারের সমালোচক সাংবাদিক, বিদ্রোহী রাজনীতিবিদ, প্রতিদ্বন্দ্বী কর্পোরেশনের বিজ্ঞানী। তাদের চেয়ারে বাঁধা হয়েছে, তাদের সমস্ত স্মৃতি, আবেগ, ভালোবাসা, ঘৃণা—সব মুছে ফেলা হচ্ছে। তারপর তাদের শূন্য মস্তিষ্কে ভরে দেওয়া হচ্ছে নতুন, বানানো স্মৃতি। তাদের বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনুগত কর্মচারী, এমনকি গুপ্তচর। তারা এখন নতুন নামে, নতুন পরিচয়ে সমাজে বিচরণ করছে, কিন্তু ভেতরে তারা একেকজন জীবন্ত পুতুল।

সবচেয়ে ভয়াবহ সত্যটা সে আবিষ্কার করলো অন্য একটি ফোল্ডারে। তার নিজের গবেষণার নোটবুক। তার আলঝেইমার্স প্রকল্পের প্রতিটি ধাপকে কীভাবে এই অশুভ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা। সে বুঝতে পারলো, তার আজীবনের সাধনা এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। তার নিজের হাত রক্তে রঞ্জিত।

ডক্টর আদনানের আতঙ্ক আর অপরাধবোধ আহনাফের সত্তাকে গ্রাস করলো। সে অনুভব করলো, তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। তার টার্মিনালের অ্যাক্সেস সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্তারা জেনে গেছে যে, সে সত্যটা জেনে গেছে।

তাকে পালাতে হবে। কিন্তু কীভাবে? সমস্ত প্রমাণ এই নেটওয়ার্কের ভেতরে। সে মরিয়া হয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো একটি কমপ্রেসড, হাইলি-এনক্রিপ্টেড ডেটা প্যাকেটে জমা করতে শুরু করলো। এটাই সেই আট ঘণ্টার স্মৃতি, যা সে মুছতে চেয়েছিল। তার পরিকল্পনা ছিলো, এই ডেটা প্যাকেটটি কোনোভাবে বাইরে পাচার করে সে একজন স্মৃতি কারিগরের কাছে যাবে। নিজের স্মৃতি মুছে ফেললে 'স্মৃতি-টেক-লিমিটেড' হয়তো তাকে মৃত বা অকেজো ভেবে ছেড়ে দেবে। এটা ছিলো বাঁচার এক মরিয়া চেষ্টা।

স্মৃতির শেষ অংশে, ডক্টর আদনান অনুভব করলো যে সময় শেষ। তার ল্যাবের দরজায় টোকা পড়ছে। একটি হলোগ্রাফিক মনিটর জীবন্ত হয়ে উঠলো। সেখানে ভেসে উঠলো এক শীতল, ভাবলেশহীন চেহারা। 'স্মৃতি-টেক-লিমিটেড'-এর সিইও, জনাব জামিল চৌধুরী।

"আদনান," জামিল চৌধুরীর কণ্ঠস্বর বরফের মতো ঠাণ্ডা। "তুমি যা করেছো, তার জন্য আমি হতাশ। কিন্তু চিন্তা কোরো না। আমরা তোমার ভুল শুধরে দেবো। তোমাকে আবার নতুন করে শুরু করার সুযোগ দেওয়া হবে।"

দরজা খুলে গেলো। দুজন নিরাপত্তা রক্ষী ভেতরে ঢুকলো। তাদের হাতে একটি সিরিঞ্জ। আদনানের শেষ চিন্তা ছিলো—সে হেরে গেছে।

এই তীব্র আতঙ্কের অনুভূতিতে আহনাফের নিজের চেতনা যেন ধাক্কা খেলো। সে অনুভব করলো, ডক্টর আদনানকে চেয়ারে বসিয়ে তার মাথায় একটি নিউরাল হেডসেট পরানো হচ্ছে। আর হেডসেটটি যে পরিচালনা করছে, তার অবয়ব দেখে আহনাফের রক্ত হিম হয়ে গেলো।

সে নিজেকেই দেখতে পাচ্ছে। সে-ই ডক্টর আদনানের স্মৃতি মুছে দিচ্ছে। সে-ই এই ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের শেষ ধাপটি সম্পন্ন করেছিলো।

আহনাফ এক ঝটকায় নিজের মাথা থেকে হেডসেটটা ছিঁড়ে ফেললো। সে তার নিজের স্টাডি রুমে ফিরে এসেছে, কিন্তু তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। সে হাঁপাচ্ছে, যেন দম আটকে আসছিলো। ডক্টর আদনানের ভয়, হতাশা আর অপরাধবোধ এখনো তার স্নায়ুতে লেগে আছে। সে শুধু একজন সাক্ষী নয়, সে এই অপরাধের অংশীদার।

ঠিক সেই মুহূর্তে, ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে তার হোম-এআই 'সাথী'র কণ্ঠস্বর বেজে উঠলো। কিন্তু কণ্ঠস্বরটা আগের মতো শান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। কেমন যেন যান্ত্রিক, অনুভূতিহীন।

"আহনাফ সাহেব, আপনার একজন অপ্রত্যাশিত ভিজিটর আছেন। 'স্মৃতি-টেক-লিমিটেড'-এর নিরাপত্তা বিভাগ থেকে। তারা আপনার সাথে কথা বলতে চায়।"

'অপ্রত্যাশিত'—শব্দটা সাথীর স্বাভাবিক শব্দভাণ্ডারের অংশ নয়। এর উচ্চারণটাও কেমন যেন বিকৃত। আহনাফ বুঝতে পারলো, তার দুর্গেও হানা দিয়েছে শত্রু। তার সিস্টেম হ্যাক করা হয়েছে।

একই সাথে, সে তার অ্যাপার্টমেন্টের মূল দরজার বাইরে ভারী বুটের শব্দ শুনতে পেলো। তারা চলে এসেছে। তারা জেনে গেছে যে, সে সত্যটা জেনে গেছে।

আহনাফ ঘরের চারদিকে তাকালো। পালানোর কোনো পথ নেই। সাতাশ তলার এই বিলাসবহুল খাঁচা থেকে বেরোনোর কোনো উপায় তার জানা নেই। সে এখন আর স্মৃতির কারিগর নয়। সে এখন শিকার।

দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ হলো।

(দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত)


স্মৃতির কারিগর - প্রথম অধ্যায় পড়ুন ক্লিক করুন। 

Kalpakatha 360

কল্পকথা ৩৬০* আপনার কল্পনার জগৎ এখন বাস্তবতার ছোঁয়ায়! Kalpakatha360 একটি সাহিত্যভিত্তিক ব্লগ, যেখানে আপনি পাবেন চিন্তা জাগানো গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, এবং বাস্তব জীবনের ছায়াচিত্র। এখানে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো ভাষা খুঁজে পায়, আর পাঠকের মনে তৈরি করে নতুন ভাবনার বিস্তার। আমাদের উদ্দেশ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চাকে সহজ, সার্বজনীন ও আগ্রহোদ্দীপক করে তোলা। আপনি যদি সাহিত্যপ্রেমী হন—তাহলে এই ব্লগ আপনার প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। *বিষয়সমূহ:* �� কল্পকাহিনি �� বাস্তবধর্মী গল্প �� কবিতা �� চিন্তার খোরাক �� সময়োপযোগী লেখা �� সাহিত্য বিশ্লেষণ আমাদের সাথেই থাকুন—চলুন কল্পনার জগতে হারিয়ে যাই...

🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।

শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post